আ. লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ: ৯ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ, গ্রেপ্তার ১৩
নরসিংদী প্রতিনিধি : আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ও নিলক্ষা ইউনিয়নে শুক্রবার পৃথক সংঘর্ষের পর নৌকা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিলক্ষা থেকে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ছয় রাউন্ড গুলিসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আমিরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) রাফিউল করিম বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন বটতলীকান্দি এলাকার হাজি সিরাজ মিয়ার ছেলে ডা. আমিনুল ইসলাম লিটন, লুৎফর রহমানের ছেলে মঙ্গল মিয়া, হোরা ডিলারের ছেলে সালাউদ্দিন, বালুয়াকান্দি এলাকার মহরম আলীর ছেলে মাইনুদ্দিন, আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাসেল, গফুর মিয়ার ছেলে মামুন, নূর হাসানের ছেলে রুবেল, সালাউদ্দিনের ছেলে সফর উদ্দিন, হাবিবুর রহমানের ছেলে জিয়া, ইমাম হোসেনের ছেলে গয়েছ আলী, চরমধুয়া এলাকার জনাব আলীর ছেলে কামাল, কেরামত আলীর ছেলে দানা মিয়া এবং আবুল হোসেন শিকদারের ছেলে খাজ আলী শিকদার।
আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন : শুক্রবারের হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে গতকাল বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করেন। শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রায়পুরায় বিবদমান সংঘর্ষটি মূলত ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। নির্বাচনের আগে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে নরসিংদীকে অশান্ত করার জন্য, আওয়ামী লীগের দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই সংঘর্ষ বাধিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের পদধারী কেউ থেকে থাকলেও এর দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছাদেককে নির্দেশ দিয়েছি, দলের কেউ এই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকলে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি পুলিশ সুপারকেও নির্দেশ দিয়েছি, যারা এই বর্বরতার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূ্ইয়া, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফর আলী ভূইয়া, রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী, রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছাদেক, নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত ডিআইজির সংবাদ সম্মেলন : গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) মো. আবু কালাম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আমরা যা পেলাম তা হলো রায়পুরার সংঘর্ষ দুটি মূলত আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর নিহত তিনজনের লাশ ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে হত্যা মামলা দায়ের করার জন্য আমরা বলেছি। তারা মামলা দায়েরের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, টেঁটা সংঘর্ষের কারণে দেশজুড়ে আলোচিত নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল নিলক্ষা ও বাঁশগাড়ী এলাকা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হামলা-সংঘর্ষে গত পৌনে দুই বছরে এই এলাকায় প্রাণ হারিয়েছে ১০ জন। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ী ও দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিলক্ষায় পৃথক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন প্রাণ হারায়। আহত হয় অর্ধশতাধিক। কালের কণ্ঠ অনলাইন