অবসরে নারিকেল-চিড়া বিক্রি করেন শরীফুল
ডেস্ক রিপোর্ট : মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোলেও আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া আর এগোয়নি। এরপর জড়িয়ে পড়েন পৈতৃক ব্যবসায়। ছোট একটি ভ্যানে শহরের আনাচে-কানাচে বিক্রি করেন চিড়া ও নারিকেলের তৈরি খাবার। প্রতি প্লেট দশ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপিতে চুক্তিবদ্ধ চাকরিও করেন।
শুরু: আবদুস সাত্তার দর্জির ঘরে জন্ম নেওয়া শরীফুল ইসলাম হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠেন। পশ্চিম বিষ্ণুদী মাঝি বাড়ি সড়কের দর্জি বাড়িতে তার বেড়ে ওঠা। ডানপিটে স্বভাবেই বেড়ে ওঠা শরীফুলের। ২০০৮ সালে বিষ্ণুদী ইসলামিয়া মহসিনিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর আর্থিক অনটনে আর লেখাপড়া করা হয়ে ওঠেনি। যোগ দেন আনসার বাহিনীতে। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে চাকরিতে যুক্ত হন। চাকরি চুক্তি ভিত্তিক হওয়ায় তিন বছর পর পর সে চাকরি আবার রিনিউ করতে হয়। তাতে প্রায় ছয় মাস পার হয়ে যায়। এ সময় পৈতৃক ব্যবসায় হাত লাগান।
সংগ্রাম: দাখিল পরীক্ষার আগে সবই চলছিল ঠিকঠাক। বাবার ব্যবসা ছিল চিড়া ভাজা আর নারিকেল মিশিয়ে বিক্রি করা। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসা করছিলেন। বাবার ব্যবসাতেই চলতো টানাটনির সংসার। দুই ভাই এক বোনের ভরণ-পোষণ আর লেখাপড়ার ব্যয় বহন করতে রীতিমত কষ্ট হয়ে যায়। তাই বাবার সাথে ছেলে শরীফুলও নেমে পড়েন কাজে।
চাকরির পাশাপাশি: চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করেন তরুণ শরীফুল। বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের হাকিম প্লাজা, কলেজ মোড়সহ শহরের বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনি এ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করেন। ৩ বছর পর যে ছয় মাস অবসর থাকেন, সে সময়টা ব্যবসায়ের কাজে লাগান।
সংসার: ছোট পরিসরে লাভজনক এ ব্যবসাকে টিকিয়ে রেখেছেন শরীফুল। সংসার নিয়ে সুখেই আছেন। ২০১৩ সালে বিয়ে করেছেন। চার বছর বয়সী একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান আছে। মেয়েকে কোরআনে হাফেজ বানাতে চান তিনি। আয়-রোজগার বেশি না হলেও পরিবারে কোন অশান্তি নেই। ৫ জনের সংসার তার উপার্জনে টেনে নিতে হয়। চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে হিমশিম খেতে হয়।
শরীফুল যা বলেন: জীবন সংগ্রামের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাবার বয়স হয়েছে। তার এখন অবসরে যাওয়া উচিত। আমি এখন তাগড়া জোয়ান। তাই পারিবারিক কর্তব্যবোধ থেকেই বাবাকে এখন সুখী দেখতে চাই।’
তরুণদের উদ্দেশে: তরুণদের উদ্দেশে শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘কোন কাজই ছোট না। সব কাজই বড় মনে করলে সফলতা ধরা দেবে। হয়তো সময় একটু বেশি লাগবে। কাজের কোনো বিকল্প নাই। লোকে নানা কথা বলবে। মনে রাখতে হবে, আমি যা করছি; তার মধ্যে সততা আছে কিনা।’ সূত্র: জাগো নিউজ