দুই শর্তে খালেদার মুক্তি!
বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ‘মাঝখানে’ দাঁড়িয়ে আছেন বেগম খালেদা জিয়া। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চাইলে সরকার বিবেচনা করবে। তবে তার নির্বাচন করা এবং জামিনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারাধীন বিষয়। আনুষ্ঠানিক সংলাপের আড়ালে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে যে দরকষাকষি চলছে তাতে ট্রাম্পকার্ড খালেদা জিয়াই। একাধিক সূত্র বলছে, আলোচনার টেবিলে সাত দফার কথা বলা হলেও বিএনপির মূল দাবি আসলে একটাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি। শুধু বিএনপির নয়, সরকারেরও ট্রাম্পকার্ড বেগম খালেদা জিয়া।
জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে আলোচনা করতে রাজি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এজন্য বিএনপিকেও অনেক ছাড় দিতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরোধিতা করতে পারবে না বিএনপি।আওয়ামী লীগ মনে করে, সরকারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হবে। তাই তারা শর্তসাপেক্ষে আলোচনার প্রক্রিয়া ঠিক করে রেখেছে।
এদিকে, রোববার (৪ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এখানে উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরিক দল বিএনপি। আর শনিবার (৩ নভেম্বর) ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নবগঠিত এই জোটটির মুখপাত্র করা হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপেরও বড় একটি অংশীদার বিএনপি।
রোববার সকালে সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। তবে প্যারোলে তার মুক্তি চাইলে তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। জামিনে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি আদালতের, সে এখতিয়ার সরকারের নয়। এসময় তিনি আরো বলেন, সংলাপ ও আন্দোলন একসঙ্গে চলতে পারে না।
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা জানান, দ্বিতীয় দফার সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে খোলামেলা আলোচনা করবে তারা। বিএনপি যদি নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়, তাহলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির আবেদন করা হলে সরকারি পক্ষ এর বিরোধিতা করবে না।এছাড়াও বিকল্প হিসেবে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পথও খোলা রাখা হবে। নির্বাচনের আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব উল্লেখ করে নেতারা বলেন, এই রাজনৈতিক সমঝোতায় বিএনপি রাজি থাকলে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে তাদের স্বাগত জানানো হবে।
১৪ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথম দফার সংলাপের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়েছে। তিনি সংলাপ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। সংলাপে ১৪ দলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট ও স্থায়ী সাংবিধানিক কাঠামোর নির্ধারণ করার বিষয়টিতেও তিনি সায় দিয়েছেন। বিএনপির অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে এখনও বিএনপি অনড়। যেভাবেই হোক, বিএনপি চাইছে খালেদা জিয়ার মুক্তি। এজন্য বিএনপিও ছাড় দিতে রাজি আছে। এ কারণেই দ্বিতীয় দফা সংলাপে বিএনপি আগ্রহী বেশি।
১৪ দলের একাধিক নেতা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে মূল আলোচনার বিষয় থাকবে খালেদা জিয়ার মুক্তি। এ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চায় বিএনপি। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলও এ বিষয়ে আলোচনায় আন্তরিক থাকব। তাদের দাবি, কিছু কিছু বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা হতেই পারে। তবে তা অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল