শাহরুখ খানের জীবনের সেই তিন নারীর গল্প
শাহরুখ খানের সেই তিন নারীর গল্পটা কেমন? কোন তিন নারীকে ছাড়া কিংয়ের জীবনকে এক অধ্যায় বলতে হবে। আসলে ওই তিন অধ্যায় আর শাহরুখের নিজের জীবন। তবে না গিয়ে হবে, বাদশার জীবনের চার অধ্যায়। বাদশার বেগম। গোটাটাই তো জুড়ে থাকবেন তিনি। কিন্তু কিংকে নিয়ে কী কী ভাবনা আসে তাঁর মনে? দেশের সবথেকে বড়, ভালো, রোম্যান্টিক হিরো, আমার স্বামী।
ভাবতে কেমন লাগে এক নারীর? মেয়েরা যখন পাগল হয়ে ওঠে ওই বুকে একবার আড়াল হয়ে যেতে, কেমন লাগে বেগমের? কেমন লাগে যখন ঘরোয়া সমস্যায় একান্ত নিজের কিংয়ের উপর রাগ হয়? আর কানে বেজে ওঠে, ‘তুম নেহি সমঝোগে রাহুল। কুছ কুছ হোতা হ্যায়!’ কেমন লাগে যখন ওই রাগের সময়ও একবার মাথায় কথাটা চলে এলে, ‘শাহরুখ-কাজল জুটি’। এরথেকে ভালো আর কিছু হয় নাকি! দুজনকে কী সুন্দর মানায়। যেন মেড ফর ইচ আদার। সিলভার স্ক্রিনে অর্ধনারীশ্বরের সার্থক উদাহরণ।
কেমন লাগে শাহরুখের বেগমের মনটা? সত্যিই কি এভাবে মানুষটা নিজের বুকের ডুকরে ওঠা কষ্টটা চাপা দিতে পারেন এভাবে যে, বড়ি বড়ি দেশোমে অ্যাসে ছোটি ছোটি বাতে হোতেহি….! ধুর অত সোজা। হয় নাকি! একে মানুষের মন। তার উপর নারী মন। সেরা প্রেমিকও বাস্তব জীবনে যে নারীর প্রেমে পড়ে জীবন থেকে আলাদা করার ঝুঁকি নিতে পারেননি, তাহলে সে নারীর মনের গভীরের তল পাওয়া এত সোজা নাকি। মনে হল, তাই রণে ভঙ্গই দিলাম। হাতড়িয়েও শেষ রক্ষা হত না। উত্তর না জেনে খালি হাতেই ফিরতে হত।
শুধু বুঝলাম, সব গ্ল্যামারের পিছনে, সব মেকআপের আড়ালে, সব মান্নতের দেওয়ালের ভিতরেও অনেক অনেক দীর্ঘশ্বাস রয়েছে। থাকতেই হবে। কোনও পারমুটেশন-কম্বিনেশন দিয়ে এই দীর্ঘনিঃশ্বাসকে পুরো ঢেকে ফেলা যাবে না কোনওদিনও। এটাই কী তাহলে গৌরীর গোরুয়া অনুভূতি? বাদশার জীবনে নারীর অভাব নেই। বরং, গৌরীই এখানে যেন ‘গেরুয়া সন্ন্যাসী রানী’! এবার যাই বাদশার জীবনের দ্বিতীয় নারীতে।
গৌরী তাঁর স্ত্রী। চিরকালের। প্রথম ভালোবাসা। কত বছর, কত মাস, কত দিন, কত মুহূর্ত, গোটা জার্নিটারই যে কাঁধে ঠোকা খেতে খেতে চলা সঙ্গী। হাসিতে, দুঃখতে, হতাশায়, উচ্চভিলাষে, কিং হওয়ার পথে চলতে চলতে প্রত্যেকটা সিঁড়িতে, ধাপে, পায়ে। কিন্তু, কাজল ছাড়া কিংয়ের জীবন সম্পূর্ণ হয় নাকি! ১৯৯৩ ১২ নভেম্বর। রিলিজ করেছিল বাজীগর। ব্যাস, সেই শুরু।দুটো নাম একটা মানুষ যেন। দুটো মুখ। একটাই ‘কাস্ট’ যেন। তারপর একে একে মিথ হয়ে ওঠা। সঙ্গে থাকলে মানে একে ফ্রেমে দুজনকে কত সুন্দর লাগে, তা মানুষই বুঝে ওঠে কোথায়। কিন্তু কুছ কুছ হোতা হ্যায় তে অঝোরে বৃষ্টির ফোঁটায় যখন ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা কাজলের জন্যই ব্যাকগ্রাউন্ডে ভেসে ওঠে তুঝে ইয়াদ না মেরি আয়ি, কিসিসে অব ক্যা কহে না।
তখনই তো মনে হয়, এটাই গেরুয়া। ওখানে স্যাক্রিফাইস রয়েছে। না পাওয়া আছে। গলার কাছটায় মাংসপিণ্ডটার দলা পাকিয়ে যাওয়া আছে। আঙুলের মাথাগুলো চিনচিন করে ওঠা আছে। আশে পাশের পৃথিবীটা একটা জড় আর নিজের মধ্যে গোটা গ্যালাক্সির প্রাণটা ছটফট করছে। এটাই যদি গেরুয়া হয়, তাহলে অজয়ের সঙ্গে রুটিন মনোমালিন্যতে কি কাজলের মনে কখনও কিং আসে না? কখনও কাজলের কুছ কুছ হোতা হ্যায় দেখতে বসে, চোখ দিয়ে অবচেতন মনেই দু ফোঁটা জল চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে না? কখনও কী একবারও মনে হয় না, সবাই বলে দুজনকে বড্ড মানায়।
তাই, আমি কি তাহলে ওর জন্যই। অথবা শাহরুখও আমার জন্যই…। এখান থেকে মনের রিমোটের বদল আনতে কী করতে হয় বাস্তবের কাজলকে? আরও পুরু করে কাজল পরে নেওয়া? যাতে অত ভারী জলের ফোঁটাটাও ওই কাজলের সীমায় এসে টলমলে হয়ে উঠে আরও সুন্দরী করে তোলে ‘শেখরের’ সামনে? নাকি সত্যিই আর আসতে বারণ করে দেওয়া মনকেই! অন্যথায় মার ডালুঙ্গী! কাজল থেকে এবার আসি তৃতীয় নারীতেই।