যে রোগে বাচ্চু মারা গেলেন, সে রোগ তো তাঁদেরও
আজনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু গত বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সকাল সাড়ে ৮টায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর তার মুখ থেকে ফেনা উঠতে থাকে। সোয়া ৯টায় ড্রাইভার তাকে হাসপাতালে আনেন। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই সময়টুকুতে অকালে চলে গেলেন কিংবদন্তি এ শিল্পী। দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন এ শিল্পী। সপ্তাহ দুয়েক আগেও একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। আগের পরীক্ষায় তাঁর হার্টের কর্মক্ষমতা ৩০ ভাগে নেমে এসেছিল বলে জানানো হয় হাসপাতালের তরফ থেকে। আইয়ুব বাচ্চুর মত হার্টের রোগে এর আগেও অনেক তারকা মারা গেছেন।
মাস চারেক (২২ মে) আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর। এমন বয়সে তার মৃত্যু অনেকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। বলিউডের শ্রীদেবীও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা গেলেন। বর্তমানে হৃদরোগকে বিশ্বের একনম্বর ঘাতকব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবছর প্রায় পৌনে ২ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এই রোগে। যা ২০৩০ সাল নাগাদ ২ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ হৃদরোগের ভয়াবহতার ব্যাপারে সেইভাবে প্রচারণা নেই।
অনেক তারকা আছেন যারা সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হৃদপিন্ডে প্রধান তিনটি রক্তনালীসহ ছোটবড় ৮টি ব্লক ধরা পড়েছে। পরে তার চিকিৎসাও করা হয়েছে। চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান গত বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য সাহায্যও করেন। গত বছরের শুরুর দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তারিক আনাম খান। হসপিটালেও থেকেছেন বেশ কিছুদিন। হার্টে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন অবশ্য সুস্থ আছেন, শুটিং করছেন।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তাঁর হার্টের রক্তনালিতে তিনটি রিং পরানো হয়েছে। সিনেমার ভিলেন পারভেজ গাঙ্গুয়া হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অভিনয়শিল্পী শবনম পারভিনও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যশঙ্কা কাটিয়ে আইসিইউ থেকে তিনি সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। সিনেমার শুটিং চলাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি ও দেশের গুণী অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানীও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হার্টের রক্তনালীতে চারটি ব্লক ধরা পড়েছে। তার অপারেশন করে রিং পড়ানো হয়েছে। তিনি এখন সুস্থ আছেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ পরিচালক কাজী হায়াত। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এই চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এখন তিনি সুস্থ। তবে কাজের খুব বেশি চাপ নিতে পারেন না বলে জানান।
এইরোগে তাঁরা পৃথিবী ছেড়েছেন:
অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশক খালেদ খান দীর্ঘদিন ধরে মোটর নিউরন ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা যান। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে নায়ক মান্না মৃত্যুবরণ করেন। দিনাজপুরের একটি ছবির শুটিংয়ের যাওয়ার পথে ট্রেনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ঢাকাই ছবির সুপরিচিত খল অভিনেতা মিজু আহমেদ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেতা খলিল উল্লাহ খানও। হৃদরোগে ভুগতেন বারী সিদ্দিকীও।
নাট্য নির্মাতা আরিফ আল মামুন ও অভিনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আলী ২০১৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একই রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠখ্যাত শিল্পী খেয়ালি কর্মকার।