‘এত কাজ দেশে করলে কোটিপতি হতাম’
‘বিদেশে যেভাবে কাজ করি এভাবে যদি দেশে করতাম তাহলে এতদিন কোটিপতি হয়ে যেতাম। দেশে তো সুখেই ছিলাম কিন্তু এখানে অনেক কাজ করতে হয়। ফাঁকি দিলে চাকরি থাকবে না। দেশের জমি-জায়গা, গরু-ছাগল বিক্রি করে মালয়েশিয়ায় এসেছি। মালিকের কথামতো সবই হয়েছে তবে কাজ করতে হয় অনেক। বেতনও খুব কম।’ কথাগুলো বলছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী নূর হোসেন।
নূর হোসেনের দেশের বাড়ি মেহেরপুর মুজিবনগরের দারিয়াপুর গ্রামে। সংসারের অভাব ঘোচাতে ২০১৫ সালের দিকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। আদম দালালের কথা অনুযায়ী সবই ঠিক ছিল। কাজও দেয় কথামতো। কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে সমস্যাটা হয় ওয়ার্কিং টাইমে।
তিনি জানান, ‘আমি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা নগদ দিয়েছি। আরও অন্যান্য খরচ তো আছেই। সবমিলে ৫ লাখ তো হবে। টাকাগুলো যদি দেশে ইনভেস্ট করতাম তাহলে এতদিন আমি সত্যিই কোটিপতি হয়ে যেতাম।’
‘শুধু ৫ লাখই নয় এর আগে সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য ৬ লাখ টাকা ধরা খেয়েছিলাম। এছাড়া সৌদি যেতে একবার ৩ লাখ ধরা খেয়েছি। অবশেষে যেটুকু জমি জায়গা ছিল সব বিক্রি করে মালয়েশিয়ায় এসেছি। দেখি এখানে কি করতে পারি।’
‘শুধু আমিই না প্রবাসীরা কঠোর পরিশ্রম করে। বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকেরা। বাংলাদেশি শ্রমিকরা যেসব কাজ করে তার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা যে কোনো নির্মাণ কাজ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় আসে বাংলাদেশি কর্মীরা যায় তাদের বেশিরভাগই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে।’ বলছিলেন অন্য এক প্রবাসী।
প্রবাসী কর্মীদের দাবি, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টের কাজ করে । এসব কর্মীরা কোম্পানির প্রয়োজনে কখনও কখনও আট ঘণ্টার জায়গায় ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করে। অনেক সময় টানা চব্বিশ বা আটচল্লিশ ঘণ্টাও কাজ করতে হয় বলে জানান মালয়েশিয়া প্রবাসী শ্রমিকরা। এসব কারণে তারা অল্প বয়সেই বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়, ফলে দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মালয়েশিয়া প্রবাসী আহসান বলেন, ‘দেশটিতে কাজ করা এক তৃতীয়াংশ বাংলাদেশি শ্রমিকই কন্সট্রাকশন বা নির্মাণ কাজে নিয়োজিত। এদের বেতন বাংলাদেশি টাকায় আঠারো থেকে ২০ হাজার টাকা। তবে অন্যান্য কাজের চেয়ে নির্মাণ কাজে পরিশ্রম ও ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি বলে জানান স্বপন।’
এক্ষেত্রে নির্মাণ শ্রমিকেরা কোম্পানির পক্ষ থেকে থাকার সুবিধা পেয়ে থাকে। সপ্তাহে একদিন ছুটি পায় তারা। তবে প্রতিদিন মোট আট ঘণ্টা কাজ করার কথা থাকলেও প্রায়ই ওভারটাইম বা অতিরিক্ত কাজ করতে হয় তাদের। এক্ষেত্রে অভারটাইম করলে সেই অনুযায়ী তাদের বাড়তি টাকাও দেয়া হয়।
নূর হোসেনও একটা সময় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতো। বর্তমানে তিনি একটা সুপারশপে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘এখন যেখানে আছি কাজ আরামের তবে বেতন খুব একটা বেশি না। যা বেতন পাচ্ছি তাতে মালয়েশিয়ায় আসার টাকাও উঠবে না। ভিসার মেয়াদ আরও কয়েক বছর আছে। বুঝছি না কি করব।’
‘বাড়িতে থাকে মা আর বৌ। ছোট একটা বাচ্চাও আছে। মাসে ১৫ হাজার টাকা পাঠাতে পারি। কোনো মাসে ১০ আবার কোনো মাসে একটি টাকাও পাঠাতে পারি না। চিন্তা-ভাবনা করেছি কাজ পরিবর্তন করবো। তাছাড়া ভালো কিছু করা সম্ভব নয়।’
দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় আছেন কামাল হোসেন। তিনি জানান, ভবন নির্মাণের কাজ করেন করি। অনেক পরিশ্রম করতে হয় বলে অনেকেই বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। দেশে ফিরে হয়তো আর কোন পরিশ্রমের কাজ করতে পারবেন না বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।