চার কেজি ওজনের সোনার পাত্রে খাবার খায় সেই চোর
অনলাইন ডেস্ক : ভারতের হায়দরাবাদের নিজামের জাদুঘর থেকে সোনা, হীরা, জহরত চুরি করে পালিয়ে মুম্বাইয়ের পাঁচতারকা হোটেলে উঠেছিল দুই চোর। চুরির এক সপ্তাহের মধ্যে ওই চোরদের ধরে ফেলে পুলিশ।
ওই চোরদের কাছ থেকে চার কেজি ওজনের একটি সোনার টিফিন বক্স উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে তাতে হীরা, চুনি, পান্না এবং একটি রুবি বসানো সোনার পেয়ালা, একটি পিরিচ, সোনার চামচ ও ট্রে ছিল। সেগুলো ওই চোরদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।
ওই টিফিন বক্সের মূল্য কয়েক কোটি টাকা। নিজাম নিজে হয়ত ব্যবহার করেননি, কিন্তু দুই চোরের একজন প্রতিদিন সেই টিফিন বাক্সেই খাবার খেত বলে জানিয়েছে হায়দরাবাদ পুলিশ।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে হায়দরাবাদের পুরানি হাভেলির জাদুঘরে ভেন্টিলেটর ভেঙে প্রবেশ করে ওই দুই চোর। মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করতে ভেন্টিলেটরের লোহার গ্রিল কেটে হামাগুড়ি দিয়ে তারা জাদুঘরে প্রবেশ করে।
হায়দরাবাদ পুলিশ কমিশনার অঞ্জনি কুমার জানান, সোনার আস্তরণ দেওয়া একটি কুরআন শরিফ চুরি করতে যাচ্ছিল তারা। সে সময় তাদের কানে আসে ফজরের আযান। জানি না তারা ভয় পেয়ে নাকি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে হঠাৎ আযান শুনে; কুরআন শরিফ তারা চুরি করে নিয়ে যায়নি।
চুরি হওয়া ওইসব জিনিসের মধ্যে শুধু সোনারই বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা কিন্তু এসবের অ্যান্টিক হিসেবে কদর মূল দামের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দুবাইয়ের বাজারে ৩০-৪০ কোটি টাকায় অনায়াসে বিক্রি করে দিত পারতো ওই চোরেরা। সেখানে প্রায় ৩২ টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তবে তাতে কোনো ফুটেজই পাওয়া যায়নি। কারণ চুরির সময় ক্যামেরার মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয় সেই চোরেরা।
ওই জাদুঘর থেকে পালানোর জন্য ১৮টি আলাদা আলাদা রাস্তা ছিল। একটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে দুই ব্যক্তি একটি বাইকে চেপে পালাচ্ছে। কিন্তু সেই ফুটেজ থেকে চোরদের মুখ দেখা একেবারেই সম্ভব ছিল না।
জানা গেছে, চোরেরা মাফলারও বেঁধে রেখেছিল মুখে। বাইকের পেছনে বসা ব্যক্তিকে দেখা যায় মোবাইলে কথা বলতে, ওই ফোনটি ট্র্যাক করতে ২২টি দল কাজে লাগিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেই চেষ্টা বৃথা যায়।
কারণ পুলিশকে বোকা বানাতে ফোন করার অভিনয় করেছিল ওই চোর। তাদের ফোনে কোনো সিমকার্ডই ছিল না। ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে যেতে পারে এমন চেহারার ব্যক্তি যারা এর আগে চুরির নানা ঘটনায় অভিযুক্ত, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। অবশেষে চারমিনারের একটি ভিডিও সার্ভিলেন্স থেকে দেখা যায়, ওই দুই ব্যক্তির বাইক মাঝ পথে রেডিয়েটরের গোলযোগের কারণে থেমে যায়।
জাহিরাবাদ জেলার কাছে পুলিশ একটি পরিত্যক্ত বাইক উদ্ধার করে, যার রেডিয়েটর খারাপ ছিল। ওই দুই চোর মুম্বাই পালিয়ে গিয়ে পাঁচতারা হোটেলে ওঠে, কয়েকদিন সেখানে বিশ্রামও করে। ঘটনার মূল অভিযুক্তের নামে ইতোমধ্যেই ২৬ টি মামলা রয়েছে। তার সহযোগী চোর বয়সে ছোট হলেও এই চুরির মাস্টারমাইন্ড। কয়েক মাস আগে পর্যটক হিসেবে জাদুঘর ঘুরতে এসেই চুরির ছক করে তারা।