সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব শাওয়ালের ৬ রোজায়!
মাহে রমজান চলে যাওয়ার পরও উম্মত যেন সিয়াম সাধনা অব্যাহত রাখে সে জন্য প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান দিয়েছেন প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। ফরজ নামাজের কমতিগুলো পূরণ করতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে, তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে রমজানের পূর্ণতা প্রদান করতে। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি পাপাচার-কামাচার প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে তাহলে তার রোজার সাওয়াব কমে যায়। আর কমতির সওয়াব পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজাসহ বছরজুড়েই রয়েছে নানা উপলক্ষে নফল রোজা।
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন তখন তাকে অন্য নেক আমলের তৌফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার লক্ষণও বটে। রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৮২২)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে কোরআনুল কারিমে। সুরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করল, সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে।’ এ হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সাওয়াব। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে।
আরও : যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুক্রবার থেকে শুল্কারোপ করছে ই.ইউ
হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি শরিফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা. ১৬২)। হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি শরিফ, খণ্ড, ১ পৃ. ১৫৭)
নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা মানুষকে অতি সহজেই আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ রোজা এমন একটি ইবাদত, যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ নিজে দেবেন।
মুমিন-মুসলমানরা যাতে শুধু রমজানের রোজা পালন শেষে থেমে না যায়, বরং আরও অল্প কয়েকটি রোজা রেখে পুরো বছরের রোজা রাখার মর্যাদা লাভ করতে পারে, সেই সুযোগ করে দিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ফরজ রোজা পালন করল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ৬ দিন রোজা পালন করল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম)
অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যখন রমজান মাসের রোজা রেখে তার সঙ্গে শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখল, সে এই রোজার কারণে আল্লাহর দরবারে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সওয়াব পেয়ে গেল।