ইথিওপিয়া: লাঠি যেখানে নারীদের রক্ষাকবচ
অনলাইন ডেস্ক : ওরোমো জাতিগোষ্ঠীর নারীরা নিজের রক্ষাকবচ এই লাঠি হাতে নিয়ে চক্রাকারে ঘুরছে আর নিজেদের ভাষায় গান গাইছে। মুখ দিয়ে বিচিত্র এক শব্দ করছে। মাঝখানে একজন নারী বসে আছেন।
এই পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে বহু পুরনো ইতিহাস। ওরোমো নারীদের যখন বিয়ে হয় তখন তারা এই কাঠের লাঠিটা পেয়ে থাকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে। সিনকিউ নামের এই লাঠিকে ওই নারী এবং তার পরিবারের রক্ষার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
ওরোমো সংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ, সারা ডুবে বলেন ‘এখানকার ঐতিহ্যবাহী যে আইন রয়েছে তাতে বলা হয়েছে, একজন বিবাহিত নারীকে অপমান বা কোনো ধরনের নির্যাতন করা যাবে না। এটা একটা অপরাধ।’
বিষয়টি আসলে কেমন হয় সেটা বোঝাতে পূর্বপরিকল্পিত একটা পরিস্থিতির অবতারণা করা হয়েছে।
এখানে দেখানো হচ্ছে একজন পুরুষ লাঠি হাতে একটি ঘরের মধ্যে ঢুকছে, উদ্দেশ্য তার স্ত্রীকে মারবেন তিনি। ঠিক সেই মুহূর্তে নারীটি তার শিশুকে কোলে নিয়ে হাতে সেই সিনকিউ নিয়ে বের হয়ে আসছেন। আর মুখে উচ্চারণ করছেন এই শব্দ।
এই শব্দ করার উদ্দেশ্য যাতে আশপাশের নারীরাও জানতে পারে যে তার ওপর নির্যাতন হয়েছে। সাথে সাথে পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা নারী রয়েছেন তারা তাদের সিনকিউ নিয়ে দৌড়ে চলে আসলেন। নারীটি মাঝখানে বসে পড়লেন। আর তাকে ঘিরে এই নারীরা ঘুরতে থাকলেন- যেন তাকে রক্ষা করা হচ্ছে সব বিপদ থেকে।
ইথিওপিয়ার ওরোমো নারীদের জন্য প্রাচীন যে গাডা ব্যবস্থা রয়েছে তার একটি অংশ এই সিনকিউ।
আরও : ৭১ বিলিয়ন ডলারে ফক্স কিনছে ওয়াল্ট ডিজনি
ওরোমো সংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ, সারা ডুবে বলছিলেন ‘যখন এই গাডা সিস্টেম চালু করা হয় তখন পুরুষদেরকে বিভিন্ন অস্ত্র দেওয়া হতো যাতে তারা পশু শিকার করতে পারে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে পারে।’ তিনি বলেন ‘মেয়েদের হাতে দেওয়া হয় সিনকিউ, যাতে তারা তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করতে পারে।’
এদিকে, নারীদের এই শব্দ শুনে গ্রামের মুরুব্বিরা চলে আসেন একটা বিচার বসানোর জন্য। চলতে থাকে শুনানি। নারীরা বলেন, ‘তাকে মারা মোটেই উচিত হয়নি। তার স্বামীর বিচার না করা পর্যন্ত আমরা শান্ত হব না।’
শুনানির পর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা তাদের রায় শোনালেন। রায় অনুযায়ী নারীর স্বামী সবার সামনে ওই নারীর কাছে মাফ চাইলেন। একই সঙ্গে সবার সামনেই প্রতিজ্ঞা করলেন আর কখনো তাকে মারবেন না। রায়ে আরো বলা হলো যদি সে এর ব্যতিক্রম করে তার জন্য ভবিষ্যতে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, ‘নারীরা কখনো এসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলেন না।’
এই সম্প্রদায়ের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ, জি আললাক গুই বলেন, ‘ঈশ্বর সবসময় তাদের পাশে থাকে যারা মিথ্যা বলেন না।’ তারা এই ঐতিহ্যকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিয়ে যেতে চান।
বিয়ের সময় মেয়ের বাবা এই সিনকিউ তৈরি করেন। আর মেয়ের মা সেটা মেয়ের হাতে তুলে দেন।
গারবি তাফিসি নামের এক নারী বলেন, ‘এটা আমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি এবং আমি নিশ্চিত করবো যাতে এটা আমি আমার মেয়ের কাছে আমি পৌঁছে দিতে পারি।’