শুটিংয়ের আড়ালে ইয়াবা পাচার
দেশে ইয়াবার চালান প্রবেশের প্রধানতম স্থান টেকনাফ সীমান্তে এখনো মাদকবিরোধী অভিযান শুরু না হলেও সেখানকার চিত্র পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে টেকনাফ সীমান্তের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিও। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্যেও ব্যাপক ধস নেমেছে।
তবে গতকাল বুধবার কক্সবাজারে শুটিং করতে এসে লক্ষাধিক পিস ইয়াবাসহ র্যাব সদস্যের হাতে আটক হয়েছেন শুটিং গ্রুপের ১০ সদস্য।
টেকনাফের স্থানীয় বাজারে সামুদ্রিক মাছের মূল্য আকস্মিকভাবে কমে গেছে। সীমান্তের ইয়াবা কারবারিরা গাঢাকা দেওয়ায় বাজারে উচ্চমূল্যে মাছ-মাংস কেনার ক্রেতা নেই। গাঢাকা দিয়েছে সীমান্ত এলাকার শত শত মোটরবাইকচালক তরুণের দল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ সীমান্তে কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন হাজার মোটরবাইক রয়েছে। এই মোটরবাইক নিয়ে তরুণের দল ইয়াবা পাচার করে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার সুলতান আহমদ গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের টেকনাফে যদিও কোনো অভিযান নেই তবু চারদিক কেমন সুনসান হয়ে গেছে। সীমান্তের বেড়িবাঁধসহ রাস্তাঘাটে আগে সন্ধ্যার পর শত শত মোটরবাইক চলাচল করত। এখন সেসব বন্ধ। ফলে বেশ আরামে আছি।’টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত কুমার বড়ুয়া গত রাতে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা
আরও : ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে স্পিকার হলেন আয়াছ মিয়া
কারবারিরা গাঢাকা দিয়েছে। এ কারণে মোটরবাইক চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মাদক কারবারিরা গাঢাকা দেওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে পণ্যসামগ্রীর মূল্যও কমে গেছে।’ তিনি বলেন, সীমান্তে ইয়াবাবিরোধী অভিযান বন্ধ নেই। তবে কারবারিরা গাঢাকা দেওয়ায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, টেকনাফ থানায় আড়াই মাস আগে যোগ দিয়ে এরই মধ্যে ১৬ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছেন তিনি।
এদিকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলাকালেই গতকাল কক্সবাজার ও টেকনাফে পৃথক অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার ইয়াবার চালান। এর মধ্যে কোস্ট গার্ড বাহিনীর সদস্যরা টেকনাফ সীমান্তে অভিযান চালিয়ে গতকাল ৫০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা গতকাল টেকনাফের খারাংখালী লবণ মাঠ থেকে উদ্ধার করেছেন এক লাখ পিস ইয়াবা। এসব উদ্ধার অভিযানে কাউকে আটক করা হয়নি।
অন্যদিকে গতকাল কক্সবাজারে শুটিং করতে এসে লক্ষাধিক পিস ইয়াবাসহ র্যাব সদস্যের হাতে আটক হয়েছেন শুটিং গ্রুপের ১০ সদস্য। কক্সবাজার সৈকতে শুটিং করতে এসে এক লাখ আট হাজার পিস ইয়াবাসহ ‘সরকার প্রডাকশন হাউস’ নামে একটি শুটিং টিমের ১০ সদস্য আটক হয়েছেন। তাঁদের আটক করেছেন র্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে তাঁদের আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের ব্যবহূত একটি মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন সরকার প্রডাকশন হাউস শুটিং টিমের প্রধান আসলাম সরকার (৪০), তাঁর ড্রাইভার মাসুদ রানাসহ (৩২) শুটিং টিমের আরো আট সদস্য।
এ ব্যাপারে র্যাব কক্সবাজার ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজশাহীভিত্তিক মিউজিক ভিডিও নির্মাণ সংস্থা সরকার প্রডাকশন হাউসের শুটিং টিমের ১০ জনকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে আসলাম সরকার ও তাঁর ড্রাইভার মাসুদ রানা ছাড়া অন্য আটজন হচ্ছেন অভিনয় ও নৃত্যশিল্পী। তাঁদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। মেজর রুহুল আমিন জানান, মিউজিক ভিডিও নির্মাণের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচারে জড়িত এই চক্র।