তারাবির নামাজ কতো রাকাত?
মুসলিম উম্মাহর নির্ভরযোগ্য সকল আলিমের মতে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত বা তার চেয়েও বেশি। বিশ রাকাতের কম তারাবি- নবআবিষ্কৃত একটি অদ্ভুত দাবি। রাসূলুল্লাহ (সা.) যদিও ৩ রাত মসজিদে এসে তারাবি জামাতের সঙ্গে পড়েছেন, কিন্তু তিনি রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করেননি। বস্তুত আমিরুল মোমিনিন হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর খেলাফতকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তারাবি পড়া শুরু হয় এবং তখন ২০ রাকাত তারাবি ছিল।
তাবিয়ি ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম রমজানে ২৩ রাকাত (বিতরসহ) নামাজ আদায় করতেন। (মুয়াত্তা মালিক, ১/১১৫, হাদিস: ২৫২) তাছাড়া হজরত উসমান (রা.) এবং হজরত আলী (রা.) এর যুগেও তারাবি ২০ রাকাত আদায় করা হত। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে বলে গেছেন যে, তোমরা আমার সুন্নাহ এবং আমার হেদায়তপ্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নাহকে অবলম্বন করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে।” (সুনানে আবু দাউদ: ৪৬০৭, সুনানে তিরমিজি: ২৬৭৬)
আরও : ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে স্পিকার হলেন আয়াছ মিয়া
অন্যদিকে যেহেতু এই ২০ রাকাত তারাবি মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের উপস্থিতিতে আদায় করা হত এবং তাঁরা এতে কোনো আপত্তি করেননি; তো বুঝা গেল এ ব্যাপারে মুহাজির ও আনসার সাহাবিগণের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সাহাবায়ে কিরাম অবশ্যই এটা দলিলের ভিত্তিতে এবং নবীজি (সা.) থেকে প্রাপ্ত কোনো নির্দেশনার ভিত্তিতেই এরূপ করে থাকবেন; যাকে হাদিসের পরিভাষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে ‘মারফু হুকমি’ বলা যায়। তারপর এই ২০ রাকাত তারাবির ওপর সাহাবা যুগ থেকে মুসলিম উম্মাহর ব্যাপক ও সম্মিলিত কর্মধারা জারি হয়েছে। এটাকে পরিভাষায় ‘সুন্নাতে মুতাওয়ারাসা’ বলা হয়; যার প্রামাণ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা শুধু মৌখিক বর্ণনাসূত্রে প্রাপ্ত বিবরণ থেকে অনেক শক্তিশালী। উপরন্তু এ বিষয়ে একটি মারফু’ হাদিসও রয়েছে- “হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানে জামাত ছাড়া ২০ রাকাত এবং বিতর আদায় করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৭৬৯২) এ বর্ণনার সনদে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও হাদিসটি ‘মুতালাককা বিল কবুল’ (এমন হাদিস যার সনদ জয়িফ, কিন্তু এর বক্তব্য অনুযায়ী সাহাবা যুগ থেকে গোটা উম্মতের আমল ছিল) হওয়ার কারণে এটার ওপর আমল করতে কোনো সমস্যা নেই। বরং এ ধরনের জয়িফ হাদিসের ওপর আমল করা একটি স্বীকৃত বিষয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেটা ওয়াজিবও হতে পারে। সুতরাং এই হাদিস জয়িফ বলে প্রত্যাখ্যান করার কোনো অবকাশ নেই। সউদি আরবের সাড়াজাগানো হাদিস গবেষক, শায়খ ইসমাঈল বিন মুহাম্মাদ আল আনসারি এ বিষয়ে ‘তাসহিহু হাদিসি সালাতিত তারাবিহ ইশরিনা রাকআতান ওয়ার রাদ্দু আলাল আলবানি ফা তাজয়িফিহি নামে খুবই চমৎকার একটি গবেষণালব্ধ গ্রন্থ উম্মাহকে উপহার দিয়েছেন; আরাবি যারা জানেন বইটি পড়ে নিলে তাদের সামনে জ্ঞান ও গবেষণার অনেক নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
যাই হোক, উপরিউক্ত পাঁচ ধরনের দলিল এবং শেষোক্ত মারফু হাদিসটির ভিত্তিতে তারাবির রাকাত সংখ্যা ২০। অন্যান্য ফকিহ ইমামের মাজহাবও হানাফিদের মতোই। মালিকি মাজহাবে যদিও এই বিষয়ে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে, তবে তা রাকাত সংখ্যা ২০ থেকে কম হওয়ার বিষয়ে নয়। তাঁদের মতে বিতরসহ তারাবির সর্বমোট রাকাত সংখ্যা ৩৯ বা ৪১।
লেখক: লন্ডন প্রবাসী