ফিলিস্তিন কিংবা সিরিয়ার ভাগ্য নির্ধারণের মওকা কেনো খোঁজে ইসরায়েল!
এ এক বিরাট প্রশ্ন যে মৃত্যুকে পায়ে ঠেলে কেন ফিলিস্তিনিরা নিরস্ত্র হয়ে হাইটেক অস্ত্রধারী ইসরায়েলি ¯œাইপারদের উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করে? ১৯৪৮ সালে নাকবা বা বিপর্যয়ের শুরুতে অন্তত ৪০০ ফিলিস্তিনি গ্রাম থেকে যে ৮ লাখ ফিলিস্তিনিকে চিরদিনের জন্যে তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তা আজও ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনি শরণার্থদের সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গাজার অনেক ফিলিস্তিনি তাদের সন্তানদের ১৫ বছর ধরে দেখতে পাননি এমন ঘটনা রয়েছে অসংখ্য। নাকবা স্মরণে গাজায় যখন ফিলিস্তিনিরা এধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানাতে থাকে তখন তারা শুধু নিরস্ত্র ছিল না তারা কোনো আক্রমণের ধারে কাছে যায়নি, ইসরায়েলি সীমান্ত অতিক্রম করেনি। ইসরায়েলি সেনারা একের পর এক গুলি করে হত্যা করেছে ফিলিস্তিনি তরুণ, তরুণীদের। তাদের টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপে ৮ মাসের শিশু লায়লা মারা গেছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এদের বলা হচ্ছে তারা সবাই হামাস সদস্য। ২ সহ¯্রাধিক আহতদের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক, সাংবাদিক কিন্তু একজন ইসরায়েলি এসব ঘটনায় সামান্য আহত হয়নি।
উল্টো হোয়াইট হাউজের উপ প্রেস সচিব রাজ শাহ বলেছেন, হামাসের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ফিলিস্তিনিরা অংশ নেয়ার কারণে এই হত্যাকা- ঘটেছে। ‘স্টপ দি ব্লাডবাথ’ শিরোনামে ইসরায়েলি মিডিয়া হারেৎজ বলেছে ইসরাইলের সীমান্ত রক্ষার অধিকার নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তার মানে এ নয় যে সীমান্ত পেরিয়ে বিক্ষোভরত মানুষের ওপর ইচ্ছেমত গুলি করা যাবে। গুলিতে ফিলিস্তিনিদের রক্তের ¯্রােত বইছে, তারপরও ইসরায়েলি স্নাইপাররা ট্রিগার থেকে আঙ্গুল তুলে নেননি। গাজায় এটি হামাসের কর্মসূচি নয়, এতো হাজার হাজার ফিলিস্তিনি যারা স্বেচ্ছায় মৃতুকে বরণ করছে। সেখানে যে কালো ধোঁয়া উঠছে এবং হতাহতের যে সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের উৎসবকে মেনে নিতে পারছে না।
আরও : ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে স্পিকার হলেন আয়াছ মিয়া
তারপরও ইসরায়েলি প্রপাগা-া বলছে, তারা শুধু হামাস ‘সন্ত্রাসী’দের গুলি করেছে যারা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছিল আমাদেরকে হত্যা করতে। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল চিত্রে দেখা গেছে কিভাবে ইসরাইলি সৈন্যরা নিরস্ত্র নারী, পুরুষ ও শিশুদের গুলি করে মারছে এবং হাসাহাসি করছে। শুধু একটি ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে ধরে রাখার জন্যে একজন বৃদ্ধকে গুলি করে হত্যা করে তারা। হুইল চেয়ারে পঙ্গু প্রতিবাদকারী রেহাই পায়নি। আহতদের সেবা করছে এমন চিকিৎসককে মেরেছে তারা। হত্যা করেছে সাংবাদিককেও। গাউন পরা চিকিৎসক কিংবা প্রেস লেখা জ্যাকেট পরিহিত সাংবাদিকদের গুলি করে তারা হত্যা করেছে এবং বলছে তারা হামাস সন্ত্রাসী ও আত্মরক্ষার অধিকার তাদের রয়েছে। কারণ ইসরায়েলিরা চায় না তাদের এ অপকর্ম বিশ্বের কেউ জানুক।
এই যখন অবস্থা তখন কোথায় আছে আন্তর্জাতিক আইন। উল্টো জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতারেস বলেছেন, লেবাননে হিজবুল্লাকে অস্ত্র সংবরণ করতে। মাত্র একদিন আগে ইসরায়েল সিরিয়ায় এফ-৩৫ সর্বাধুনিক বিমান দিয়ে সর্বপ্রথম আঘাত হানার কথা গর্বভরে প্রচার করে। কই জাতিসংঘ মহাসচিব তো সে নিয়ে কিছু বলছেন না। গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যার ব্যাপারে মহাসচিব তদন্ত শুরু করার ক্ষমতা পর্যন্ত রাখেন না বলেই মনে হচ্ছে। সেখানে সিরিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ বলেছেন, তার দেশে ইরান ও লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের উপস্থিতি কিংবা তাদের প্রত্যাহার কোনো আলোচনার বিষয় নয়।