নারী-পুরুষের মেলামেশায় আর বাধা নেই সৌদিতে
কট্টর মতাদর্শের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব থেকে। সিনেমা হল থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, ফুটবল মাঠে নারীদের খেলা দেখার অনুমতি, গাড়ি চালানোয় নারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর এবার সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হল, আধুনিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে, নারী-পুরুষের মেলামেশাও আর কোনো বাধা নেই । সাম্প্রতিক সময়ে ২৩৬ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতিতে এ প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ৩৪.৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্ধে ‘কোয়ালিটি অব লাইফ প্রোগ্রাম-২০২০’ ঘোষণা করে সৌদি সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় নারী পুরুষের মেলামেশায় বাধা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ২৩৬ পাতার একটি বিবৃতি ঘোষণা করা হয়, সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে বেশ কিছু কট্টর নিয়মকানুন লঘু করার কথা ভাবছে সৌদি সরকার। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, উন্নত জীবনের জন্য দ্রুত এই পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দুটি কট্টর ধর্মাচারেও পরিবর্তনের কথা উঠেছিল। আর তাতে যে ধর্মীয় পুলিশদের আক্রমনে পড়তে হতে পারে প্রশাসনকে, সেই আশঙ্কায় বৈঠকে ওই পরিবর্তনের সম্পর্কে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। শুধু জানানো হয়েছিল, তা ১৫৬ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। তবে পরে যখন বিবৃতিটি অনলাইনেও পোস্ট করা হয়, তাতে ওই দুটি অংশ রাখা হয়নি। কোনো সরকারি কর্মকর্তাও এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, মূলত সামাজিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের মেলামেশার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে বিবৃতিতে। দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার সময়ে দোকানপাট, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ- এমনকি ওষুধের দোকানও বন্ধ থাকে সৌদিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এবার থেকে কেউ ওই সময়ে দোকান খোলা রাখলে তা আর ‘অবৈধ’ হিসেবে গণ্য করা হবে না। এতদিন মেয়েরা কোনো খেলায় অংশ নিলেও তা লোকচক্ষুর আড়ালে আলাদা করে আয়োজন করা হতো। এবার থেকে প্রকাশ্যে মেয়েদের খেলার আয়োজন করার কথা বলা হচ্ছে।
সৌদি আরবে পরিবর্তনের জোয়ার এসেছে ২০১৫ সাল থেকেই। ওই বছরে ক্ষমতায় আসেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। নতুন যুগের সূচনা হয় দেশের রাজনীতিতে। এরপর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত ধরেই আরও বদলাতে শুরু করেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি একটি বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ৩২ বছরের সালমান মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭৯ সালের আগে সৌদি আরব এ রকম ছিল না। ওর পরেই দেশটি জঙ্গিদের হাতে পড়ে আমূল বদলে যায়। সৌদির পুরনো মূলগত ভিত্তিতেই ফিরতে চান সালমান।
ধর্মীয় পুলিশদের ক্ষমতা নাশ করতে ওঠেপড়ে নেমেছেন তিনি। একটা সময়ে চাইলেই কাউকে গ্রেফতার করতে পারতেন ধর্মগুরুরা। প্রথমেই সে ক্ষমতা কেড়ে নেন এ দুই রাজা। রীতি ভেঙে প্রথম সংগীত সম্মেলন হয় সৌদি আরবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কট্টর মতাদর্শ ছড়ানোর বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেন সালমান। নারী অধিকারের দিকেও নজর দেয়া হয়। সূত্র: এনডিটিভি ও ব্লোমবার্গ