যে কারণে চুক্তিতে মাত্র ১০ ক্রিকেটার
স্পোর্টস ডেস্ক : বছর কয়েক ধরে বাংলাদেশ দল এত ভালো খেলছে, অথচ বিসিবি কিনা কাঁচি চালাল খেলোয়াড়দের চুক্তিতে! ১৬ থেকে চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়ের সংখ্যা নেমে এল ১০-এ। পরে ‘রুকি’ শ্রেণিতে যদি কেউ যোগ হনও, সেটি হবে তরুণদের মধ্য থেকে। খেলোয়াড়দের প্রতি এ ভারি অন্যায়।
এভাবে ভাবা যায়, যদি আপনি অতি আবেগপ্রবণ মানুষ হন অথবা যদি ক্রিকেটের পেশাদারি দিকটিকে ভুলে থাকেন। বাস্তবে পরশু বিসিবির সভার সিদ্ধান্তটিকে বরং ক্রিকেটের পেশাদারির পথে আরেকটি ধাপই বলা যায়। যেখানে পারফরম্যান্সই শেষ কথা।
সভার পর সংবাদ সম্মেলনেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড় কমানোর সুপারিশটি এসেছে নির্বাচক কমিটি এবং ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ থেকে। কেন এই সুপারিশ, কাল সেটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন ক্রিকেট পরিচালনা-প্রধান আকরাম খান, ‘দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। প্রথমত দেখেছি, তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই কাদের পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে ৮০ ভাগের ওপরে এ রকম খেলোয়াড় আছে। তাদের চুক্তিতে বিবেচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা দেখেছি, কারা পারফরমার। আমরা চাই, চুক্তিতে থাকার জন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে পারফরম্যান্সের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক। যারা ভালো পারফর্ম করবে না, তারা চুক্তির বাইরে থাকবে।’
প্রথমে ‘রুকি’ শ্রেণির প্রস্তাব না করার ব্যাখ্যাও আছে। বছর তিনেক ধরেই বিসিবির চুক্তিতে এটি নেই। তরুণ খেলোয়াড়দের রাখা হয় ‘ডি’ শ্রেণিতে। চুক্তির বাইরের কোনো খেলোয়াড় জাতীয় দলে এলে দলে থাকার সময়ের জন্য তাঁকেও ‘ডি’ শ্রেণির বেতন দেওয়া হয়। এবারও সে রকমই চিন্তা ছিল নির্বাচকদের। তবে বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন ‘রুকি’ শ্রেণি যোগ করা হবে। তিন বা চারজনের এই শ্রেণিতে লিটন দাসের থাকা নিশ্চিত। বাকি দু-তিনজন ঠিক হবে বিসিএলের ম্যাচ শেষে রাজশাহী থেকে নির্বাচক হাবিবুল বাশার ঢাকায় ফিরলে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, চুক্তি থেকে বাদ পড়া ছয় ক্রিকেটারের কেউ এই শ্রেণিতে থাকছেন না।
চুক্তি-টুক্তি নিয়ে খেলোয়াড়েরা কখনোই প্রকাশ্যে খুব একটা কথা বলেন না। চুক্তিতে থাকা ও বাদ পড়া বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও প্রায় কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। এক অনুষ্ঠানে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যা বললেন, সেটাও ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতোই, ‘বেতন একজন খেলোয়াড়ের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বেশির ভাগ খেলোয়াড় এসেছে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। বেতন বা খেলার বিরাট প্রভাব থাকে তাদের পরিবারের ওপর। তবে কয়জনকে বেতন দেবে না দেবে, এই সিদ্ধান্তটা বোর্ডের।’ এরপর যোগ করেছেন, ‘তারা বাংলাদেশের সত্যিকারের ভবিষ্যৎ, তাদের সমর্থন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমার জায়গা থেকে আমি পিছপা হব না। যত প্রকার সমর্থন দেওয়ার আমি দেব।’
চুক্তি থেকে বাদ পড়া ছয়জনের অন্যতম ইমরুল কায়েস অতীত থেকে প্রেরণা খুঁজছেন, ‘ভালো খেলিনি, তাই বোর্ড আমাকে চুক্তি থেকে বাদ দিয়েছে। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ২০১২ সালেও আমি চুক্তি থেকে বাদ পড়েছিলাম। পরে পারফর্ম করে আবার চুক্তিতে ফিরি। এবারও সেই চেষ্টাই করব।’
আগের মতোই ছয় মাস পর চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করবেন নির্বাচকেরা। নতুন চুক্তির খেলোয়াড়দের শ্রেণিবিন্যাস বিসিবি এখনো ঘোষণা না করলেও জানা গেছে ৩ লাখ টাকা বেতনের ‘এ’ শ্রেণি থেকে ৪ লাখ টাকার ‘এ প্লাস’ শ্রেণিতে উঠে আসছেন মাহমুদউল্লাহ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তি নিয়েও নতুন পরিকল্পনা আছে বিসিবির। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন জানিয়েছেন, চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড় কমিয়ে বাড়ানো হবে ম্যাচ ফি। অর্থের সেই বৃদ্ধিটা বর্তমানের দ্বিগুণও হতে পারে। বর্তমান নিয়মের ফাঁক গলে অনেকে এক মৌসুমে এক-দুটি ম্যাচ খেলেই চুক্তিতে চলে এসে বিসিবির বেতন সুবিধা ভোগ করে। এই অপচেষ্টা ঠেকাতে হচ্ছে নতুন নিয়ম। যাঁরা দুই বছর সময়ের মধ্যে ৬৫-৭০ শতাংশ ম্যাচ খেলবেন না, তাঁদের চুক্তির জন্য বিবেচনা করা হবে না।
বর্তমানে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ৭৭ জন। জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা এই চুক্তির বাইরে।