ফুটবল উন্নয়নে মাশরাফির ভাবনা
স্পোর্টস ডেস্ক : নড়াইলের মানুষের জন্যই ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ গঠন করেছেন জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা—এই তিনটি বিষয় সামনে রেখেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে ফাউন্ডেশনটির। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। তবে এবার ব্যাপক আকারে কাজ করার জন্য খেলাধুলা নিয়ে অনন্য এক উদ্যোগ নিয়েছেন মাশরাফি। নিজে ক্রিকেটার হলেও অন্যান্য ক্রীড়া ইভেন্ট নিয়ে ভাবছেন দেশসেরা এই তারকা। আপাতত ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল নিয়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন মাশরাফি! নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ক্রিকেট ও ফুটবলের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৩০ জন করে উদীয়মান খেলোয়াড় বাছাই করা হবে। যাদের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। যারা সম্ভাবনাময় তাদেরই খুঁজে খুুঁজে বের করতে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন। এখানে খেলোয়াড়দের জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থাও করা হবে। আর এ জন্য খেলোয়াড়দের কাছ থেকে কোনো রকম ফি নেওয়া হবে না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ফ্রি-তে খেলোয়াড়দের জন্য এ কাজ করবে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন।
মাশরাফি তার এই অনন্য উদ্যোগে পাশে পাচ্ছেন বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিএস ফাইন্যান্স লিমিটেডকে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আইপিডিএসের তিন বছর মেয়াদি একটি চুক্তিও হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষর শেষে মাশরাফি বলেন, ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নড়াইলবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলাসহ সব কিছুর মান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখি আমরা। তবে ফাউন্ডেশনের একার পক্ষে এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। নড়াইল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরির জন্য খেলাধুলার যাবতীয় প্রশিক্ষণ প্রদানে এগিয়ে এসেছে আইপিডিএস ফাইন্যান্স। এ জন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’ নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের খেলাধুলাবিষয়ক এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে দারুণ খুশি আইপিডিএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘আইপিডিএস ফাইন্যান্স লিমিটেড সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। সেই ধারাবাহিকতায় নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হলো। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা খুবই গর্বিত। যদিও ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে তিন বছরের। তবে এখানেই তো আর শেষ নয়। হয়তো আরও দীর্ঘ মেয়াদি কিছু করার চিন্তা আছে।’
নড়াইলের খেলোয়াড়দের ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য আগে কোনো জিম ছিল না। তবে এবার নড়াইল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একটি জিমের ব্যবস্থাও করবে আইপিডিএস।
নড়াইল ফাউন্ডেশনে নড়াইলের বাইরের জেলার কোনো খেলোয়াড়কে নেওয়া হবে না। মাশরাফি আপাতত তার জন্মভূমি নড়াইল জেলা নিয়েই কাজ করছেন। তবে তার বিশ্বাস, ‘আমরা চাই, নড়াইলে আমরা যে উদ্যোগটা নিয়েছি অন্যান্য জেলাতেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হোক। যাতে সেখানকার প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা উঠে আসার সুযোগ পান। আশা করি, নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগ দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবেন।’ মাশরাফির মতো জাতীয় দলের অন্য ক্রিকেটাররাও যদি নিজেদের জেলায় এমন ধরনের উদ্যোগ নেন তাহলে এদের খেলাধুলার মান অনেক বেড়ে যাবে। নড়াইল এক্সপ্রেস মনে করেন, ‘জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারই কিছু না কিছু করছেন মানুষের জন্য। তবে আমি এখন কেবল এক ফরমেটে খেলছি, তাই বেশি সময় পাচ্ছি এসব করার। যারা তিন ফরমেটেই খেলছেন, তারা একটু বেশি ব্যস্ত।’
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের জন্য জেলাটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুটবল ও ক্রিকেটে ৭৭ জন করে খেলোয়াড় বাছাই করাও হয়েছে। এদের মধ্য থেকে বাছাই করে ৩০ জন্য করে মোট ৬০ জনকে সুযোগ দেওয়া হবে। বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে মাশরাফি বলেন, ‘এখানে কোনো রকম স্বজনপ্রীতি চলবে না। যারা প্রকৃত মেধাবী তাদেরই কেবল সুযোগ দেওয়া হবে। জাতীয় পর্যায়ের কোচদের দিয়েই আমরা ৩০ জন করে ফুটবলার ও ক্রিকেটারকে বাছাই করব। তবে প্রতি তিন মাস পর পর আমরা রিভিউ করব, যারা ভালো করতে পারবে না তাদের বাদ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। জেলায় নতুন যারা ভালো করবে তাদের সুযোগ দেব। ভবিষ্যতে আমরা অন্যান্য ক্রীড়া ইভেন্ট নিয়েও কাজ করতে চাই। আমি নিজে ক্রিকেটার কিন্তু চাই অন্যান্য ক্রীড়া নিয়েও কাজ করতে। এখন যেমন ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল নিয়েও কাজ করছি। ইচ্ছা আছে ভলিবল, টেবিল টেনিসের মতো ইভেন্টগুলো নিয়েও কাজ করার।’
মাশরাফি মনে করেন, আইপিডিএসের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হলেও তাদের এ উদ্যোগটি আজীবনের জন্য। বিপদে নড়াইলের মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তার লক্ষ্য। ‘মানুষ মানুষের জন্য’— এ কথাটি যে মনেপ্রাণে ধারণ করেন মাশরাফি।