রবিবার, ২২শে এপ্রিল, ২০১৮ ইং ৯ই বৈশাখ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

দুই সিটি নিয়ে জাপার ‘দর-কষাকষি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বললেও বিষয়টি এখন পরিষ্কার করতে চাইছে না। সব আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে হাঁকডাক দিচ্ছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনকে রাজনৈতিক ‘দর-কষাকষি’ হিসেবে নিয়েছে জাপা।

‘আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৭০ আসন এবং ১০/১২টি মন্ত্রণালয় চেয়েছি। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিক হয়ে থাকতে চাই। আমাদের কথা মতো আসন আর মন্ত্রণালয় না দিলে এককভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব।’ গত শনিবার রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তার এ বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

এ প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচন কীভাবে হবে এটা বলা এখন কঠিন। তবে এখন অনেক কথাই হবে, চূড়ান্ত কথা হবে নির্বাচনের কিছু আগে। পরিস্থিতি এবং জনতার দাবি বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এটা নির্বাচনী কৌশল। অনেক রকমের কথা হবে, এগুলো কৌশল।

এর আগে ৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। ওই বৈঠকে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। পরে খবর বের হয় জাতীয় পার্টি আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না। এর আগে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি জাপা।

তবে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে বিপুল ভোটে জয় পায় জাপাপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া গাইবান্ধা-১ আসনের উপ-নির্বাচনে জাপাপ্রার্থী জয়ী হয়। একই দিন অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে পরাজিত হয় জাপা।

আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে শফিকুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জাপা সূত্রে জানা গেছে।

জাপা নেতাদের দাবি, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হওয়ার মতো প্রার্থী জাপার নেই। সে ক্ষেত্রে জাপা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাপার এক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিক আসন পেতে আসন্ন দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারে জাপা। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে কি-না, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাপা নেতারা জানান, বিএনপি নির্বাচনে আসলে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ বাদে অন্যদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নেবে জাপা।

এ প্রসঙ্গে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, গাজীপুরে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, তারা জয়ী হওয়ার মতো শক্তিশালী ছিলেন না। তবে খুলনায় আমরা প্রার্থী দেব।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিজয়ের পথে জাতীয় পার্টি, অগ্রযাত্রার পথে জাতীয় পার্টি। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার আন্তরিক প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি। যেই মুহূর্তে আমরা অনেক উত্থান দেখি সেই মুহূর্তে একটা প্রার্থী দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না। জনতার আস্থা রাখতে বিষয়গুলো চিন্তা-ভাবনা করে আমরা প্রার্থী দেই।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাপার ভালো প্রার্থীরা সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মেয়র নির্বাচন করতে গেলে অনেক অর্থ খরচ হবে। পরে সংসদ নির্বাচন করতে গেলে অর্থের সঙ্কট দেখা দিতে পারে, এ কারণে সিটি নির্বাচনে কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন জানানোর জন্য জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের নেতা ওবায়দুল কাদের ও জাহাঙ্গীর কবির নানক। ওই বছরের ২৩ জুন এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গাজীপুরের জন্য জাপার সমর্থন চাওয়া হয়।

আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে ওই দুই সিটিতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষে আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন।

দুই সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীসহ একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাগো নিউজ

Print Friendly, PDF & Email