দুর্দান্ত মোস্তাফিজ, শেষ বলে নাটকীয় জয় সাকিবদের
স্পোর্টস ডেস্ক : অবিশ্বাস্য! নিদাহাস ট্রফির ফাইনালই যেন ফিরে এল হায়দরাবাদে। শেষ ওভারে এবার ১২ নয়, ১১ দরকার ছিল। সেদিন শেষ বলে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে হারিয়েছিলেন দিনেশ কার্তিক। আজ শেষ বলে চার মেরে সে কাজটা করলেন এগারোতে নামা বিলি স্টেনলেক! মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে ১ উইকেটে হারিয়ে স্নায়ুক্ষয়ী এক ম্যাচ জিতে নিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
কাগজে-কলমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের খেলা। তবে বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এটা শুধুই সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান ম্যাচ। তো সে লড়াইটা শুরু হলো ম্যাচের সপ্তম ওভারে। বোলিংয়ে এলেন সাকিব। প্রথম ওভারটি ছিল দুর্দান্ত। মাত্র এক রান দিয়েছেন সে ওভারে। কিন্তু এমন বোলিংটা আর দেখাতে পারলেন না। পরের তিন ওভারে রান এক অঙ্কেই আটকাতে পারেননি। পরের ওভারের প্রথম ৪ বলেই ১৩ রান দিয়ে দিলেন। পঞ্চম বলে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে ফ্লাইটে বোকা বানিয়ে ক্যাচ বানালেন। নিজের শেষ দুই ওভারে ১০ রান করে দিয়েছেন সাকিব। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে এক উইকেট।
দলের জন্য সাকিব অবশ্য অবদান রেখেছেন দ্বিতীয় ওভারেই। প্রথম ওভারে বল করতে এসে সন্দীপ শর্মাও সাকিবের মতোই ১ রান দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ওভারেই রোহিত শর্মা এক ছক্কা ও এক চারে সেটা ভুলিয়ে দিচ্ছিলেন প্রায়। কিন্তু বিলি স্টেনলেকের শেষ বলটা ঠিকভাবে খেলতে পারেননি, টপ এজটা সামনে ঝাঁপিয়ে হাতে জমা নিয়েছেন সাকিব।
সাকিবের এ দুই অবদানের মাঝেই আরও দুই উইকেট হারিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। ৪ উইকেট হারিয়ে ফেললেও মুম্বাই ধীরে ধীরে বিপদ কাটিয়ে উঠছিল। ১০ ওভার শেষে ৭৮ রানও তুলে ফেলেছিল দলটি। কিন্তু কাইরন পোলার্ড থাকার পরও মুম্বাইয়ের স্কোর দেড় শ না পেরোনোর কারণ রশিদ খান। সাকিব, সন্দীপের মতোই প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়েছেন রশিদ। কিন্তু এ দুজন এটা করতে পারেননি সেটা করেছেন আফগান লেগ স্পিনার। তাঁর বাকি তিন ওভার থেকেও মাত্র ১২ রান তুলতে পেরেছে মুম্বাই। মাত্র একটি উইকেট পেয়েছেন কিন্তু ১৮টি ডট আর মাত্র ১৩ রান দিয়ে মুম্বাইয়ের বড় স্কোরের স্বপ্নটা একদম চুপসে দিয়েছেন রশিদ। ওপেনিংয়ে নামা এভিন লুইসের ১৭ বলে ২৯ রানই তাই হয়ে থাকল মুম্বাইয়ের সর্বোচ্চ।
জবাবে রান তাড়ার শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে হায়দরাবাদের। প্রথম ৬ ওভারে বিনা উইকেটেই এল ৫৬ রান। রানের হিসেবে মুম্বাইয়ের চেয়ে মাত্র ২ রান এগিয়ে থাকলেও হাতে বাড়তি তিন উইকেট ছিল হায়দরাবাদের কাছে। সপ্তম ওভারে প্রথম ধাক্কা খেল স্বাগতিক দল। লেগ স্পিনার মায়াঙ্ক মারকান্দের গুগলিতে বোকা বনে এলবিডব্লু ঋদ্ধিমান সাহা (২২)। ৬২ রানে প্রথম উইকেট হারাল হায়দরাবাদ।
পরের ওভারেই বল পেলেন মোস্তাফিজ। শুরুটা একদমই মন মতো হয়নি। দ্বিতীয় বলেই চার। পঞ্চম বলটা খুব ভালো করে উল্টো ফল পেলেন। বল প্রথম স্লিপ দিয়ে ছুটে চার! প্রথম ৫ বলেই ১০ রান। ওভারের শেষ বলটাও ঠিক তেমনভাবে খেলতে চেয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু ব্যাটে বলে হয়নি, অন্তত প্রথমে তাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু মোস্তাফিজ ও উইকেটকিপার ইষাণ কিশানের জোরালো আবেদন করলেন আউটের। রিভিউ নেওয়ার সেটাই সঠিক প্রমাণিত হলো। ৬ রানেই বিদায় অধিনায়ক উইলিয়ামসনের। পরের ওভারেই হায়দরাবাদকে আসল ধাক্কা দিলেন মারকান্দে। এই লেগ স্পিনারকে হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়লেন ধাওয়ান। ২৮ বলে ৮ চারে ৪৫ করে ফিরলেন হায়দরাবাদের মূল ব্যাটিং ভরসা। মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে হঠাৎ বিপাকে হায়দরাবাদ। মারকান্দের পরের ওভারেই মনীশ পান্ডেও ফিরে গেলে হারের আশঙ্কাও জেগেছিল হায়দরাবাদের। ৮৯ রানে ৪ উইকেট হারাল স্বাগতিক দল।
১২তম ওভারেই মুহূর্তটা এল, আইপিএলের ‘বাংলাদেশ’ পর্ব। সে পর্বে জিতলেন সাকিব। মোস্তাফিজের ৪ বলে ৮ রান নিলেন সাকিব। সে ওভারে এল ১০ রান, হায়দরাবাদেরও এক শ পার হলো। মোস্তাফিজকে দারুণ সামলালেও মারকান্দেকে সামলাতে পারলেন না সাকিব। এই লেগ স্পিনারের ৪ ওভারের স্পেলের সবচেয়ে নিরীহ বলটাই স্ট্যাম্পে টেনে আনলেন। ১২ বলে ১২ রান করে ফিরলেন সাকিব। মাত্র ২৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট পেলেন আগের ম্যাচেই অভিষিক্ত মারকান্দে। হায়দরাবাদের তখনো জয়ের জন্য দরকার ৪১ রান। বল নিয়ে (৪২টি) কোনো দুশ্চিন্তা না থাকলেও ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলাটাই ভাবাচ্ছিল হায়দরাবাদকে।
মোস্তাফিজের দেখা মিলতে মিলতে আবার ১৬তম ওভার। ৩০ বলে তখন মাত্র ২৭ রান দরকার হায়দরাবাদের। তখনই নিজের সেরা ফর্মে দেখা দিলেন মোস্তাফিজ। দারুণ ৬টি বলে এল মাত্র ৩ রান। তবে ম্যাচের রং বদলাল ১৮তম ওভারে। জসপ্রীত বুমরার প্রথম তিন বলে ৩ রান নিয়ে ফেলেছিল হায়দরাবাদ। পর পর দুই বলে ইউসুফ পাঠান ও রশিদকে আউট করে হঠাৎ ম্যাচে প্রাণ ফেরালেন বুমরা।
১২ বলে ১২ রান দরকার এমন মুহূর্তে বল করতে এলেন মোস্তাফিজ। ১ রান, ডট, ডট, আউট! টানা দুটি বল অফ স্টাম্পের বাইরে করার পর চতুর্থ বল স্টাম্পে ফেলতেই মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দিয়ে ফিরলেন সিদ্ধার্থ কৌল। পরের বল ডট, শেষ বলে আবারও আউট। মোস্তাফিজকে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শর্ট ফাইনে আউট সন্দীপ শর্মা। ১৩৭ রানে ৯ উইকেট হারাল হায়দরাবাদ।
৬ বলে ১১ রান। বেন কাটিংয়ের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দিলেন দীপক হুদা। পরের বল ওয়াইড! দ্বিতীয় বলে ডট, পরের বলে এক রান। স্ট্রাইকে স্টেনলেক। স্টেনলেক হতাশ করেননি, প্রথম বলেই এক রান নিয়ে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দিলেন হুদাকে। পঞ্চম বলে আরেকটি সিঙ্গেল। শেষ বলে আবারও স্ট্রাইকে স্টেনলেক। জয়ের জন্য ১ রান দরকার। স্টেনলেক ঝামেলায় গেলেন না, চার মেরেই দলকে জেতালেন!