দীর্ঘ ৫৯ দিন পর মুক্ত আলো-বাতাসে খালেদা জিয়া
নিউজ ডেস্ক : দীর্ঘ ৫৯ দিন কারাগারের বাইরে মুক্ত আলো-বাতাসে আসার সুযোগ পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে কারারক্ষীদের পাহারায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট ছিলেন তিনি। এই সময়ে দলের নেতাকর্মীদের দেখা পেয়েছেন। দেখা মিলেছে তার ছোট ছেলের বউ ও নাতনিদের সঙ্গেও।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। ওই দিনই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ৫৯দিন টানা কারাগারে থাকার পর কারারক্ষীদের পাহারায় স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাকে শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়।
দীর্ঘদিন পর নেত্রীকে দেখার সুযোগ পেতে সকাল থেকেই হাসপাতালের আশেপাশে অবস্থান নেন বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কয়েকশ নেতাকর্মী। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধায় চলে যেতে হয় তাদের। তবে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে খালেদা জিয়ার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজ (গতকাল) আমাদের নেত্রীকে দেখতে পেয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। আমরা তার মুক্তি চাই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।’
বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার হাসপাতাল আসাকে ‘জোর করে আনা হয়েছে’ বলা হলেও ক্ষমতাসীনরা জানিয়েছেন, ‘জেলকোড অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
প্রথমবারের মতো খালেদা জিয়াকে সাদা-কালো শাড়িতে সাদামাটা অবস্থায় দেখা গেছে। সাধারণত, তিনি বাসভবনের বাইরে এলে রঙিন শাড়ি, রঙিন চাদর গায়ে জড়িয়ে রাখলেও শনিবার দেখা গেছে ভিন্ন পোশাকে।
বিষয়টি নিয়ে কারা-কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য পাওয়া না গেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেছেন, ‘একজন মুসলিম ধর্মপ্রাণ নারী হিসেবে ৩০/৩২ বছর ধরে তিনি শাড়ির ওপরে চাদর অথবা ওড়না পরিধান করেন। এ সরকার এত হীন যে, একজন বয়স্ক নারী, যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাকে চাদর অথবা ওড়না পরার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তাকে একরকম জোর করেই গাড়িতে তুলে হাসপাতালে আনা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শনিবার (৭ এপ্রিল) হাসপাতালে আনার সময় সম্পূর্ণ অপ্রস্তুতভাবে আনা হয়েছে। কারাগারে তার কক্ষের কাছে গিয়ে বার বার তাগিদ দিতে থাকেন কর্মকর্তাসহ ৭/৮ জন কারারক্ষী।’
শনিবার বেলা ১১টা ২০মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী পাজেরো গাড়িটি হাসপাতালের গেটের সামনে এলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর হাসপাতালের ভেতরের কেবিন ব্লকের সামনে গিয়ে থামে গাড়িটি। তখন তাকে স্বাগত জানান হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন। সেখানে তার জন্য আনা হয় একটি হুইল চেয়ার। কিন্তু তিনি হুইল চেয়ার ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে লিফটে দিকে যেতে যেতে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধে হাসি মুখে ছবি তোলার সুযোগ করে দেন। এরপর ওই ভবনের ৫ তলা ৫১২ নম্বর কেবিনে যান। সেখানে তিনি প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট অবস্থান করেন।
খালেদা জিয়া হাসপাতালের আসার আগে থেকে সেখান অবস্থান করেন তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই নাতনি জাফিয়া ও জাহিয়া। তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ দেখা করতে পারবেন না। পরে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কেবিনে খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বিএসএমএমইউ-এর কেবিন ব্লক থেকে এক্সরে পরীক্ষার জন্য রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে নেওয়ার পথে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান পুত্রবধূ ও দুই নাতনি। তারা খালেদার জিয়ার কুশল জিজ্ঞাসা করেছেন।’
শায়রুল কবির আরও বলেন, ‘বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন, একেএম আজিজুল হক, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াও কেবিন ব্লকে চেয়ারপারসনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।’
বেলা ১২ টা ৪০ মিনিটে আবার লিফটে করে নেমে পায়ে হেঁটে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে যান খালেদা জিয়া। সেখানে প্রায় ১ ঘণ্টা তার বিভিন্ন এক্স-রে ও আল্ট্রসনোগ্রাম করানো হয়। এরপর বেলা ১ টা ৪০ মিনিটে সেখান বাইরে এসে গাড়িতে ওঠার আগে হাসপাতালে অবস্থানরত নেতাকর্মী ও বিভিন্ন রোগী ও তাদের স্বজনদের হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান। আবারও উপস্থিত সাংবাদিকরা অনুরোধ করলে হাত নাড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ দেন তিনি। বেলা ১ টা ৪৩ মিনিটে তাকে বহনকারী গাড়িটি কারাগারে উদ্দেশে হাসপাতাল ত্যাগ করে।
খালেদা জিয়ার হাসপাতালে অবস্থানকালে বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হাসপাতালে খালেদা জিয়ার অবস্থানকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজুলল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আফরোজা আব্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, তাবিথ আউয়াল, নজরুল ইসলাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, রফিকুল ইসলাম, ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তবে বরিশালে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ থাকায় স্থায়ী কমিটির বাকি সদস্যরা আসতে পারেননি।
বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অনেকেই যেখানে যোগ দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামীকাল রবিবার নাগাদ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পাওয়া যাবে।