একদিনে এতো কুরআনে হাফেজ আর কখনও নিহত হয়নি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাঝে কয়েক মাসের বিরতির পর আফগানিস্তান এখন আবারও প্রায়ই শিরোনাম হচ্ছে। হয় বোমা হামলা, নয় বন্দুকধারীর হামলায় কিছুদিন পরপরই সেখানে বেসামরিক ব্যক্তি হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন এটি সেখানে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে তালেবানদের প্রায় পরাজিত করার পর দেশটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
কিন্তু আফগানিস্তানের কিছু এলাকায় বিশেষ করে কুন্দুজ ও কাবুল প্রদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও তালেবানরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলা চালায়। এর জবাবে আফগান বাহিনীও প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এসব প্রদেশে তালেবান ও আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে।
সোমবার কুন্দুজ প্রদেশের দাস্ত-ই আরচি জেলায় একটি মাদরাসায় আফগান বাহিনীর তেমনই এক বিমান হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও কমপক্ষে ৩০ জন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি। তারা বলছেন, ওই হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়ে থাকতে পারে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, সেখানকার একটি মাদরাসার শতাধিক শিক্ষার্থী কুরআন মুখস্থ করা উপলক্ষে দাস্তার বান্দি নামে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। আর ওই অনুষ্ঠানেই এই হামলা চালানো হয়।
অনুষ্ঠানটা মূলত মাদরাসার হলেও আফগান সরকারের দাবি সেখানে তালেবানদের কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিল।
এমনকি আফগান সরকার প্রথমদিকে দাবি করে যে, ওই হামলায় কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়নি। কিন্তু পরে অবশ্য আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, আফগান জাতীয় সেনাবাহিনী নিখুঁত তথ্যের ভিত্তিতে ওই হামলা চালিয়েছে। মানুষজনদের ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় ওই হামলায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেসামরিক ব্যক্তির হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ওই হামলায় হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও তালেবানরা দাবি করেছে, ওই হামলায় ১৫০ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত বা আহত হয়েছেন। এমনকি তারা এই হামলার প্রতিশোধ নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে মাদরাসাকে অপারেশনের টেবিলে আফগান বাহিনী তুললেও আসলে ছুরিটা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ১৬ বছর ধরে চলা যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে প্রায়ই বিমান হামলা চালায় মার্কিন ও আফগান বাহিনী। এর আগে আফগান বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলায় গেলো মাসেই সাতজন কৃষক নিহত হন। তাদের মধ্যে দুইজনই কিশোরও ছিল।
তবে সোমবারের হামলার পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার তদন্ত করবে।
বিশ্বের সহিংসতা প্রবণ দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান একটি। সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রতিদিনই জঙ্গি গোষ্ঠী বা সরকারি বাহিনীর হামলায় বেসামরিক ব্যক্তিরা নিহত হচ্ছেন। কিন্তু স্মরণকালের মধ্যে একদিনে এতো কুরআনে হাফেজ নিহত হওয়ার ঘটনা কখনও ঘটেনি।