কারাগারে চলছে ধোয়ামোছা
- প্রস্তুতির বিষয়গুলো নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।
- কাশিমপুরের নারী কারাগার (কাশিমপুর-৩) প্রস্তুত।
- নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলের সংস্কার।
- রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া একবারই কারাগারে যান।
- গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ ছিলেন।
খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়-পরবর্তী সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রস্তুতি রাখছে কারা প্রশাসন। রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হলে তাঁকে কোথায় রাখা হবে, সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারা কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া কারাগারে সর্বোচ্চ (ডিভিশন) সুবিধা পাবেন। এসব মাথায় রেখেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে বিষয়গুলো নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।
কারাগারের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সাজা হলে খালেদা জিয়াকে গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় নারী কারাগারে (কাশিমপুর-৩) রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। ওই কারাগারেই ভিআইপি নারী বন্দী রাখার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থাও বেশ ভালো। তবে সেখান থেকে ঢাকার আদালতে আনা-নেওয়ার পথ ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।
আবার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলের দোতলার ঘরগুলোতেও ধোয়ামোছার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে চারটি বড় ঘর রয়েছে। এখানে আগে নারী বন্দীদের শিশুসন্তানেরা খেলাধুলা করত। এখন সেখানে সংস্কার চলছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন নাজিমুদ্দিন রোডে কারা কর্তৃপক্ষের ওই প্রস্তুতি দেখে গেছেন। ভেতরে পুলিশ রয়েছে।
খালেদা জিয়াকে এই কারাগারে রাখা হলে তাঁর তত্ত্বাবধানে দুজন ডেপুটি জেলার থাকবেন। একজন নারী ডেপুটি জেলার কারাগারের ভেতরে আরেক পুরুষ ডেপুটি জেলার বাইরে থাকবেন। সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসকও থাকবেন। ওই কারাগারের ভেতরে দায়িত্ব পালনের জন্য কয়েকজন দক্ষ ও পুরোনো কারারক্ষীকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে বাছাই করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পুরান ঢাকার বকশীবাজার নাজিমুদ্দিন সড়ক ঘিরে ৮ ফেব্রুয়ারি থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা। তবে কারাগারের কর্মকর্তাদের মতো পুলিশের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন বকশীবাজারের বিশেষ কারাগারের আশপাশে বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। এমনিতেই আদালত প্রাঙ্গণে কোনো নেতা-কর্মীকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। আর ওই দিন বকশীবাজার, পুরান ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে কোনো নেতা-কর্মীকে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে রায়ের ওপর।
খালেদার কারাভোগ
৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া একবারই কারাগারে যান। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি গ্রেপ্তার হন। তাঁকে সংসদ ভবন এলাকার স্থাপন করা বিশেষ কারাগারে রাখা হয়। পাশাপাশি আরেকটি ভবনে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে মুক্ত হন খালেদা জিয়া।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রাথমিক সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগ দেন খালেদা জিয়া। এরপর তিনবার পুলিশ তাঁকে আটক করে। তবে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়নি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন তিনি। এর মধ্যে প্রথম দুবার ঘটনাস্থল থেকে আটক করে তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেয় পুলিশ। ১৯৮৭ সালে হোটেল পূর্বাণীতে এক অনুষ্ঠান থেকে আটক করে আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে তাঁকে কিছু সময় মতিঝিল থানায় নেওয়া হয়। অবশ্য পুলিশ সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তার বা আটকের বিষয়ে কোনো কিছু বলেনি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘অঘোষিত’ভাবে তাঁকে গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে। তবে এটা আইনানুগ নয়।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময় ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর গুলশানের বাসায় অবরুদ্ধ করা হয় তাঁকে। আর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি তাঁর গুলশানের কার্যালয়ের দুই পাশে বালুর ট্রাক রেখে অবরুদ্ধ করা হয়। ৯৩ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।
প্রথম আলো