প্রয়োজনে বিএনপি ছাড়াই নির্বাচন করবে সরকার
বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, সরকার হার্ডলাইনে থেকে ফলাফল নিজেদের পক্ষে রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রয়োজনে আবারও বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত তারা। ক্ষমতাসীনদের ধারণা, এতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষাও হবে, ক্ষমতা ধরে রাখাও হবে। তাই নির্বাচনের আগে বিএনপিকে কোনো ছাড় দেবে না সরকার। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিচারের রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে বিএনপিকে নির্বাচনের আগে বাড়তি কোনো সুবিধা নিতে দেবে না সরকার। তাই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ের যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। বরং এ যাত্রায় বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে ভাষণে বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তারা (বিএনপি) অসাংবিধানিকভাবে সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সব সময় সমুন্নত রাখবে। সে জন্য সংবিধানপরিপন্থী কোনো সরকার আমরা গ্রহণ করব না।’
সূত্রমতে, সরকার মনে করছে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করলে বা দলটিকে কোনো ছাড় দিলে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবে। অর্থাৎ প্রশাসনের শিথিল মনোভাবের সুযোগ নিয়ে রাজপথ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বে, যার প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। ফলে বিএনপিকে সরকার কোনো ‘স্পেস’ দিতেই কৌশলগত কারণে রাজি নয়। তার বদলে প্রশাসনসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেই পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। দলটির নেতাদের মতে, এতে ঝুঁকি অনেক কম।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এর আগে আমরা বিএনপিকে ডেকেছি। তারা আসেনি। সংলাপের আর প্রয়োজন নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এ ডিসেম্বরেই নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। যারা আসার আসবে, যারা আসবে না তারা ভুল করবে।’
তোফায়েল আহমেদ বিএনপির আন্দোলন ও নাশকতার বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা করে কেউ রক্ষা পাবে না। তাদের নেত্রীর আদালতে প্রায় প্রতিটি হাজিরায় যাওয়া কিংবা আসার সময় গোলযোগ হয়। গোলযোগ ও অরাজকতা করে লাভ নেই। এসব করে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না। গতকাল (মঙ্গলবার) তারা যে কাজ করেছে, ভুল করেছে। এর মাসুল তাদের দিতেই হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়কে ঘিরে যদি আগুন নিয়ে খেলা হয়, তাহলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার পুলিশের ওপর হামলা ও পূর্ব নির্ধারিত ৮ ফেব্রুয়ারির আদালতের রায় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত ও সতর্ক থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুতি রেখেছেন। বিশেষ করে প্রিজন ভ্যান ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকারের কঠোর মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ওই দিন রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসায় হানা দেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপির কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তারা যদি সহিংসতা চালায় তাহলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা ছিল বিএনপি ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি নাশকতা চালাতে পারে। কিন্তু তারা আগেই কাজটি করে ফেলল। এ অবস্থায় আমরা নেতাকর্মীদের বলে দিচ্ছি যেন তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিজেরাও সজাগ থাকে, যাতে বিএনপি কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না করতে পারে।
সূত্র জানায়, বিএনপিকে এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে চাপে রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। তারা দলটির অতীত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সহিংসতার সংবাদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার অব্যাহত রাখবে, যাতে করে ৫ জানুয়ারির মতো পরিস্থিতির সৃষ্টির দায় আবারও বিএনপির ওপর চাপানো যায়। এভাবে নির্বাচনী বৈতরণী অতিক্রম করার কৌশলও রয়েছে ক্ষমতাসীনদের।
সূএ : কালের কন্ঠ