শনিবার, ২৭শে জানুয়ারি, ২০১৮ ইং ১৪ই মাঘ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল : শিক্ষামন্ত্রী

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ২৫, ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পেলে পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

গত কয়েক বছর ধরেই পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস এক আলোচিত বিষয়। বেশ কিছু পরীক্ষার আগে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন পাওয়া গেলেও পরীক্ষা বাতিলের ঘটনা তেমন একটি ঘটেনি। তবে এবার এ বিষয়ে আগেভাগেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘যখনই কোনো প্রশ্ন ফাঁস হবে, আমরা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ওই পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করব।’

এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা জানান। মন্ত্রী জানান, এবার সারাদেশে পরীক্ষা হবে অভিন্ন প্রশ্নে। ফলে শিক্ষার্থীদের সমমূল্যায়ন হবে।

এর আগে সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষা শেষের পরেও যদি প্রমাণিত হয় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তবে সে পরীক্ষা বাতিল করা হবে।’

‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আমরা খুবই ডেসপারেট ও অ্যাগ্রেসিভ। কারণ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’

প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই এটা বরদাশত করব না। তদন্ত চলছে, দায়ীদের চিহ্নিত করার পর কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

‘আমরা সবদিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। আগে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হতো, সেটা বন্ধ করেছি। কিন্তু এখন শিক্ষকরাই প্রশ্নফাঁস করছেন। তবে সব শিক্ষক নন, কিছু শিক্ষক এসবের সঙ্গে জড়িত।’

সভায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পরিচালক নাজমুল আলম বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ট্রেজারি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক বড় গাফিলতি হয়। সেখান থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’

‘ইতোমধ্যে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে। আমরা তা নিয়ে কাজ করছি।’

সামাজিক মাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত দুই একদিনের মধ্যে

পরীক্ষা চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার বিষয়ে আগের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুক, ভাইভার, টুইটার, ইমু, হোয়াটস অ্যাপ, উইচ্যাটসহ সবধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের বিষয়ে আমরা বিটিআরসি এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সামাজিক মাধ্যমগুলো কত ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকবে এটা দুই একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে।’

কোচিং সেন্টার বন্ধ শুক্রবার থেকেই

এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোচিং সেন্টার বন্ধ হবে আগেই।

পরীক্ষাকে সামনে রেখে আগামীকাল শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) থেকেই সারাদেশে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, পরীক্ষা চলাকালে এগুলো আর খোলা যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, ‘কোচিং সেন্টার হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আখড়া। এ কারণে পরীক্ষার সাত দিন আগে থেকে এই কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।’

এবার প্রশ্ন ফাঁস রোধে সরকার আর যে কৌশল নিয়েছে সেটা হলো, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ। আর শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশের আগে প্রশ্নপত্র খোলা যাবে না বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

নাহিদ বলেন, ‘দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা কর্মকর্তারা একটি টিম করে দেবেন যারা পরীক্ষার আধঘণ্টা আগেই কেন্দ্রে পৌঁছাবে। তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কোনোভাবেই প্রশ্নের প্যাকেট খোলা যাবে না।’

‘কেউ এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্রে মোবাইল কোর্টও থাকবে, তবে দেশের সব কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। আর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।’

প্রশ্ন হবে অভিন্ন

গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে চলতি বছর থেকে সারাদেশে একই প্রশ্নে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার কথা জানানো হয়। এবারের এসএসসি পরীক্ষা থেকেই এটা চালু হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

বাংলাদেশে আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে প্রতিটিই আলাদা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ায় কোনো কোনো বোর্ডের শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যেই খারাপ ফলাফল করেছে বা অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীর তুলনায় নম্বর কম পেয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এবার একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ায় ফলাফলে তারতম্য থাকবে না বলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের সমসুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আলমগীর হোসনে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানারা বানু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।