‘গোপাল ভাঁড়ের গল্পের মতো মোটা লোক ফাঁসানো হয়েছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাকে ‘কল্পিত মামলা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান উল্লাহ। তাঁর দাবি, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। মামলার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। আসামিরা কোনো অপরাধ করেননি। গোপাল ভাঁড়ের গল্পের মতো নিরীহ মোটা লোক ধরে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
এই মামলার আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহেমদ ও সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে আজ বুধবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় আইনজীবী আহসান উল্লাহ এসব কথা বলেন।
এ মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে আসেন আজ দুপুর ১২টার দিকে। আর বেলা তিনটার দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে তিনি আদালত চত্বর ছেড়ে যান। এর আগে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল প্রধান আসামি খালেদা জিয়াসহ ছয়জন আসামির সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেন। এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন খালেদার পাঁচজন আইনজীবী। যুক্তিতর্ক শুনানির সময় প্রত্যেকে বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্য সাক্ষীরা মিলেমিশে জাল নথি তৈরি করে তাঁকে (খালেদা জিয়া) ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা চলছে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলার ঢাকার বিশেষ জজ-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামানের আদালত কাল বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করেন। একই আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে। মামলাটি যুক্তিতর্ক শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
বুধবার ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও সালিমুল হক কামালের আইনজীবী আহসান উল্লাহ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় গোপাল ভাঁড়ের গল্পসহ বিভিন্ন গল্পের উদাহরণ টেনে আনেন। আহসান উল্লাহ বলেন, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহেমদ ও সালিমুল হক কামাল এই ট্রাস্টের কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। অথচ তাঁদের মামলার আসামি করা হলো। বারবার তিনি আদালতকে বলতে থাকেন, এ মামলা কোনোভাবে চলতে পারে না। ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ হলে মামলা হবে ট্রাস্ট আইনে। অথচ মামলা করা হলো ফৌজদারি আইনে।
এক তাঁতির ষাঁড় কেনার পর তাঁর দুর্গতির গল্প রসাত্মক ভঙ্গিতে বর্ণনা করে আইনজীবী আহসান উল্লাহ বলেন, তাঁর মক্কেল ভালোই ছিলেন। কিন্তু রাজনীতি করতে এসে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আর এক চিকন লোকের শূলে চড়ানোর পরিবর্তে রাজার নির্দেশে মোটা লোক ধরে এনে শূলে চড়ানোর গোপাল ভাঁড়ের গল্প উল্লেখ করে আহসান বলেন, সালিমুল হক মোটা মানুষ। নিরীহ সালিমুল হককেও ধরে এনে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কথায় কথায় আইনজীবী আহসান উল্লাহ বলতে থাকেন, মামলায় কিছুই নেই, অসাড় যুক্তিহীন অবাস্তব কল্পিত মামলা। তিনি যখন ট্রাস্ট আইনের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে বলছিলেন, ট্রাস্ট আইন লঙ্ঘিত হলে ফৌজদারি আইনে কীভাবে মামলা হয়। এ সময় আদালত আহসান উল্লাহর কাছে প্রশ্ন রাখেন, যখন মামলা হলো তখন কেন তিনি মামলার কার্যক্রম স্থগিত কিংবা বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করলেন না? এখন তিনি কেন এসব কথা বলছেন। তাঁর দুই মক্কেল কেন খালাস পাওয়ার যোগ্য, সেই যুক্তি তুলে ধরার জন্য আহসান উল্লাহকে নির্দেশ দেন।
আহসান উল্লাহ পুরো সময় বিভিন্ন গল্প রসাত্মকভাবে বর্ণনা করে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। পাশাপাশি ওয়ান-ইলেভেন সরকারের ভূমিকা, বর্তমান দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্র নিয়ে তাঁর নিজের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, ‘ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাকার কারণে ফেঁসে গেছেন ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন ও সালিমুল হক কামাল।’
২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এ মামলা করে। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলায় শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।