সুন্দরবনের ৩ কুখ্যাত জলদস্যুবাহিনীর প্রধানসহ ৩৮ আত্মসমর্পণ
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বরিশাল থেকে ফিরে : বরিশাল নগরের রুপাতলীর র্যাব-৮ সদরদপ্তরে আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ‘বড় ভাই’, ‘ভাই ভাই’ ও ‘সুমন’ বাহিনীর এসব সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।
এ নিয়ে গত ২১ মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি জলদস্যু বাহিনী র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। র্যাব-৮ এর উপ-পরিচালক মেজর সোহেল রানা প্রিন্স জানান, সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে র্যাবের বিশেষ অভিযানে জলদস্যু ‘বড় ভাই’ বাহিনীর প্রধান মো. আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা, ‘ভাই ভাই’ বাহিনীর প্রধান মো. ফারুক মোড়ল ও ‘সুমন’ বাহিনীর প্রধান মো. জামাল শরিফ সুমনসহ ৩৮ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।
এ সময় দেশি-বিদেশি ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ওইসব অস্ত্রের দুই হাজার ৯৬৯ রাউন্ড গুলি জমা দেন তারা।
অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৪টি বিদেশি একনালা বন্দুক, নয়টি বিদেশি দোনালা বন্দুক, তিনটি পয়েন্ট ২২ বোর বিদেশি রাইফেল, ছয়টি বিদেশি এয়ার গান, পাঁচটি পাইপ গান ও একটি বিদেশি কাটা রাইফেল।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র্যাব-৮ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজীব-এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন-বড়ভাই বাহিনীর প্রধান মো. আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা (৪৯), সদস্য বাচ্চু শেখ (৩৫), মাহামুদ হাসান (২৩), মো. রফিকুল ইসলাম (৪২), ওলি ইজারাদার (৩১), গোলাম মাওলা (৫০), অলিয়ার শেখ (৫০), বরকত আলী শেখ (৫০), রেজাউল মোল্লা (৪৫), রিপন শেখ (৩১), খালিদ ইজারাদার (৪০), মিকাইল ইজারাদার (৩১), বায়েজিদ মোল্লা (৩৪), লিটন আলী ইজারাদার (৩১), মাজেদ ইজারাদার (৫০), এসএম মেহেদি হাসান মিলন (৩১), আব্দুল মজিদ ভাঙ্গী (৫৫), ইউনুস আলী (৩২)।
ভাই ভাই বাহিনীর সদস্যরা হলেন প্রধান ফারুক মোড়ল (৩০), সদস্য রেজাউল সানা (৫০), অনিমেষ বাড়ৈ (২৪), কুতুব উদ্দিন গাজী (৩০), ইমদাদুল হক (২৮), আলমগীর হাওলাদার (৩২), আলামিন হাওলাদার (৩০), হাবিবুর রহমান সিকদার (৩২)।
সুমন বাহিনীর সদস্যরা হলেন প্রধান জামাল শরিফ সুমন (৪২), কাইয়ুম জোমাদ্দার (২৯), আলামিন মৃধা (৪০), জামাল তালুকদার (৩৫), রাজা ফরাজি (২৫), আলামিন খা (২৫), মো. রফিকুল (৪১), আকরাম হোসেন গাজী (৩১), জুয়েল রানা (৩০), আবুল কালাম শেখ (৬০), মিলন হাওলাদার (২২), ছমির তালুকদার (৪৫)।
আত্মসমর্পণকারীরা সবাই খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। র্যাব প্রতিষ্ঠার পর হতে এ পর্যন্ত সফল অভিযানে ৪১৪ জন জলদস্যু/বনদস্যু গ্রেফতার, ১৪৫৮টি অস্ত্র, ২৭,৬৭৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার আইনের আওতায় নিয়ে আসে। ফলে সুন্দরবন কেন্দ্রিক বনদস্যু/জলদস্যু বাহিনীর অপতৎপরতা বহুলাংশে কমে এসেছে। সাধারনত ইলিশ ও শুটকি মৌসুমকে কেন্দ্র করে জলদস্যু/ডাকাতরা তাদের ডাকাতি, জেলে অপহরণ এবং অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সে কারনে ইলিশ মাছ আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুমে সুন্দরবন এলাকায় যাতে মৎস্য আহরনকারী জেলেদের জলদস্যু কর্তৃক অপহরণ/ডাকাতির কবলে না পড়তে হয় সে লক্ষ্যে র্যাব সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু/ডাকাত দমনে বিশেষ আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করেছে।
র্যাবের এই কঠোর তৎপরতার কারনে (এখন পর্যন্ত বিগত ২০ মাসে সর্বমোট ১৪টি বাহিনীর ১৫২ জন জলদস্যু, ২৮২টি অস্ত্র ও ১৩,৯২১ রাউন্ড গোলাবারুদ সহ র্যাব-৮ এর নিকট আতœসমর্পণ করে) এ ঘটনা সমুহের ফলে সুন্দরবনে সক্রিয় অন্যান্য জলদস্যু বাহিনী সমূহের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি পশ্চিম সুন্দরবনের জলদস্যু বাহিনী “(ক) বড় ভাই বাহিনী (খ) ভাই ভাই বাহিনী এবং (গ) সুমন বাহিনী’’ উৎসাহিত হয়ে একই পথ অনুসরন করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।