আমরাই বাংলাদেশকে আলাদা করেছি: নওয়াজ শরিফ
পাকিস্তানে একের পর এক গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুৎ করার প্রসঙ্গ তুলে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ১৯৭১ সালে তাদের কারণেই বাংলাদেশ আলাদা হয়েছিল।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদে পাঞ্জাব হাউজে একদল আইনজীবীর সমাবেশে তিনি একথা বলেন বলে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পাওয়ার পরও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা ছাড়েনি। উল্টো নানা টালবাহানার পর বাঙালির ওপর চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ, যার পরিণতিতে স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ওই প্রসঙ্গ তুলে নওয়াজ বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী ছিলেন না, কিন্তু আমরা তাকে বিদ্রোহী করেছিলাম।”
তিনি বলেন, “পাকিস্তান সৃষ্টিতে বাঙালির কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমরা ভালো আচরণ করিনি এবং আমাদের থেকে আলাদা করেছি।”
পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ তিনবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে কোনোবারই মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। সর্বশেষ গত বছর আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পর ২৮ জুলাই পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
এর আগে ১৯৯০ ও ১৯৯৭ সালে দুই বার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি নওয়াজ। দ্বিতীয়বার সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি দেশান্তরিত হয়েছিলেন। তখন বেশিরভাগ সময় থাকতেন সৌদি আরবে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ।
তার আগের পাকিস্তানের ১৭ জন প্রধানমন্ত্রীর কেউই তাদের পুরো মেয়াদ কখনও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
পাকিস্তানের এই পরিণতির জন্য দেশটির সেনা শাসকদের কৃতকর্মের জন্য বিচারের মুখোমুখি না হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখছেন নওয়াজ শরিফ।
এ প্রসঙ্গেও একাত্তরে বাঙালির উপর সংঘটিত নিষ্ঠুরতা এবং তার জন্য কারও শাস্তি না হওয়ার বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।
নওয়াজ বলেন, “বিচারপতি হামদুর রহমান কমিশন বাংলাদেশের সৃষ্টি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণপূর্বক খুবই সত্য ও স্পষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমরা তা পড়েও দেখিনি।
“ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা যদি পদক্ষেপ নিতাম তাহলে আজকের পাকিস্তান ভিন্ন হত এবং যে ধরনের খেলা হয়ে থাকে সেগুলো হত না।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে পাকিস্তান সরকার গঠিত হামদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনে একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে দায়ী করে তাদের বিচারের সুপারিশ করা হয়।
পাকিস্তান সে অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থায়ই নেয়নি। একাত্তরে গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাও চায়নি। বরং বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যা নিয়ে এই নওয়াজের সর্বশেষ আমলেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়।
পানামাপেপারর্সে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ার তথ্য ফাঁসের পর আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুৎ হয়ে এখন দেশটির বিচার বিভাগ ও দৃশ্যত সেনাবাহিনীর সমালোচনা করছেন তিনি। সেনা কর্তাদের সমালোচনায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হিসেবে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টানলেন।
“স্বৈরশাসকের বিচার করতে পারে এমন আদালত পাকিস্তানে কখনও আসেনি,” বলেন তিনি।