খান আতাকে পুনরায় ‘রাজাকার’ দাবি করে যা বললেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ
---
সম্প্রতি নিউইয়র্কে এক সাংস্কৃতিক অভিবাসীদের সমাবেশে পরিচালক ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানকে ‘রাজাকার’ দাবি করেছিলেন নাট্যজন ও মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। এরপরেই শুরু হয় সমালোচনা।
তবে রবিবার রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেইজে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন এই নাট্যজন। পাঠকদের জন্য সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল:
খান আতাউর রহমান প্রসংগ।
………………………
সম্প্রতি নিউইয়র্কে সংস্কৃতি কর্মীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্য শেষে এক প্রশ্ন উত্তরে কৃতি চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীত পরিচালক ও অভিনেতা খান আতাউর রহমান সম্পর্কে আমার একটি উক্তিকে কেন্দ্র করে ফেসবুক ও অনলাইনে সংবাদ মাধ্যমে তর্ক-বিতর্ক চলছে। অহেতুক বিতর্ক নিরসনে আমার কথা পুনর্ব্যাক্ত করছি।
* বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণে অপারগ হয়েছিলেন। যে ৫৫ জন বুদ্ধিজিবী ও শিল্পী ১৯৭১ -এর ১৭মে মুক্তিযুদ্ধকে “আওয়ামী লীগের চরমপন্থীদের কাজ” বলে নিন্দাসূচক বিবৃতি দিয়েছিলেন দু:খজনকভাবে খান আতাউর রহমান তার ৯ নম্বর সাক্ষরদাতা ছিলেন। (১৭মে ১৯৭১ দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকা দ্রষ্টব্য)।
* ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার ড. নীলিমা ইব্রাহীমকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলেন রেডিও টেলিভিশনে পাকিস্তানীদের প্রচার কার্যে সহযোগীতা কারীদের সনাক্ত করার জন্য। ১৯৭২ -এর ১৩মে নীলিমা ইব্রাহীম কমিটি যে তালিকা সরকারকে পেশ করেন সে তালিকায় ৩৫ নম্বর নামটি খান আতাউর রহমানের।
তালিকাভুক্তদের সম্পর্কে কমিটির সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তালিকাভুক্ত শিল্পীদের ৬ মাস পর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ পুনর্বিবচনার সুপারিশ করা হয়। (দ্রষ্টব্য – বাংলাদেশ বেতার তথ্য মন্ত্রণালয়ের নং জি১১। সি-১। ৭২। ১৬/৬/৭২)
* একথা অনস্বীকার্য যে খান আতাউর রহমান একজন গুণী শিল্পী। তার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নাই। মুক্তিযুদ্ধপূর্বকালে তাঁর চলচ্চিত্রসমূহ আমাদের ঋদ্দ্ব ও উজ্জিবীত করেছে । যেমন “সোয়ে নাদীয়া জাগো পানি” “নবাব সিরাজদৌলা” সহ অনেক চলচ্চিত্র। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং তা তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। আবার আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হান, শহীদউল্লাহ কায়সারের মত শিল্পী সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল্ন তাঁদের স্বীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন উদ্রেক হয়েছে যে ৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর অব্যহতিতে কেন আমি বা আমরা তাঁকে রক্ষা করেছিলাম। কারণ খান আতাউর রহমান কোন প্রকার মানবতা বিরোধী কর্মে লিপ্ত ছিলেন না যদিও পাকিস্তানীদের সমর্থনে রেডিও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছেন। আর খান আতাউর রহমান একজন শিল্পী এবং ৯মাসে তাঁর কর্ম সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। তাছাড়া আমরা এও ভেবেছি ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক অনেকে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছে। আমরা তা বিচারের এখতিয়ার রাখিনা। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের এ কথা বাধ্যতামূলক মানতে বলা হয়েছিল যে কোন অবস্থাতেই যুদ্ধোত্তর সময়ে কাউকে ক্ষতি বা আঘাত করা যাবেনা। বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্তদের বিচার করা হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। মুক্তিযোদ্ধারা সেই আদেশ পুরোপুরি ভাবে মেনেছিলো বিধায় যুদ্ধোত্তর কালে প্রাণহানির ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম হয়েছিল। জেনেভা কনভেনশন মুক্তিযোদ্ধারা পুরোপুরি মেনেছিলো কিন্তু পাকিস্তানীরা জেনেভা কনভেনশনের তোয়াক্কা করেনি।
* আমার মূল বক্তব্যে নয় এক প্রশ্নের উত্তরে ইতিহাসের দায় থেকে আমি খান আতাউর রহমান সম্পর্কে উক্তিটি করেছিলাম। সবশেষে আবারো বলছি খান আতাউর রহমান একজন সৃষ্টিশীল মানুষ কিন্তু ১৯৭১ সালে তিনি দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমার তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই শিল্পী হিসাবে তাঁর প্রশংসা করি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালে তার ভূমিকার সমালোচনা তো করতেই পারি।
* আশা করি আমার উপরোল্লিখিত বক্তব্য অনুধাবনে সকল তর্ক-বিতর্কের অবসান ঘটবে।