প্রয়োজনে মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের আহ্বান ফখরুলের
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : কূটনৈতিক ব্যর্থতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন ও রাশিয়ার মতো প্রভাবশালী দেশের সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ- এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর প্রয়োজনে অবরোধ আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এবং বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আজ শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ নাগরিক ঐক্য। সভায় বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, কূটনৈতিক ব্যর্থতায় গুরুতর হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে তাদের রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। তার জন্য স্যাংকসান দিতে হবে প্রয়োজনে এমবার্গো আরোপ করতে হবে। এটা বারবার বলে আসছি আমরা এবং সেটা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে। আমাদের ব্যর্থতাগুলো কোথায় সরকারের? তারা এখন পর্যন্ত চীনের মতো, রাশিয়ার মতো দেশকে তারা সেভাবে কনভিন্স করতে পারেনি। এখানে কী হচ্ছে, কেন এখানে টর্চার করা হচ্ছে, কেন মিয়ানমারকে বাধ্য করা উচিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তত্ত্বাবধান করতে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ১৪ হাজার শেড নির্মাণ হবে বলে শুনতে পেরেছি। এর মধ্যে মাত্র চার হাজার সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাকিটা যতটুকু শুনেছি টেন্ডারের মাধ্যমে সরকার করবে। সেটা কীভাবে করবে সেটা আমরা সহজেই বুঝতে পেরেছি। অথচ সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্বটা দিলে অতিদ্রুততার সাথে ও অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজটি হতে পারত।’
দুঃখ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিয়ানমারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের সাতটি দেশের মধ্যে চীন ও রাশিয়ার কারণে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ এখন পর্যন্ত সরকার চীন ও রাশিয়াকে কনভিন্স করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
‘আমরা অন্য কোনো দেশ নিয়ে মাথা গলাতে চাই না। আমরা এটাও চাই না, আমাদের অভ্যন্তরে অন্য কেউ নাক গলাবে। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এসেছে। অথচ সরকার নিন্দাও জানায়নি। এটাকে আগ্রাসন মনে করতে হবে।’ বলছিলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক সরকার চাই। নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এ জন্য কাজও করছি। স্বৈরাচারী সরকারের গত আট বছরের নির্যাতনের কারণে আমরা বহু ত্যাগ শিকার করেছি। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে এখনো সরে যাইনি। বাংলাদেশে তো গণতান্ত্রিক সরকার নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এমন সমস্যা হতো না। একটা গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যাটি কোনো সমস্যাই থাকত না।’
জাতিসংঘের মহাসচিবের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। এরপর কোনদিকে কোন মোড় দেবে আমরা সহজে বলতে পারি না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়। আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে দেশরক্ষার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন।’
বাংলাদেশ বৌদ্ধ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা জামাল হায়দার, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, জেবেল রহমান গনি, জাহানারা পারভীন, মাওলানা আবদুর রব, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, আহম্মদ আবদুল কাদের প্রমুখ।