g মিয়ানমারকে সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিল এবার জার্মানি | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ৩১শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারকে সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিল এবার জার্মানি

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
news-image

---

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে দেশটির বেশ কিছু খাতে সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। সোমবার জার্মানির উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এই খবর প্রকাশ করেছে।

জার্মানির উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্যাথরিনা মায়েজ বলেন, মিয়ানমারে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, চিকিৎসাসেবাসহ বেশ কয়েকটি খাতে সহায়তা করে আসছিল জার্মানি। যেসব অঞ্চলগুলোতে সহিংসতা চলছে সেখানে এই সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধ হলে আবার এই সহায়তা কার্যক্রম দ্রুত চালু করা হবে।

জার্মানির আরেক সরকারি মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সহিংসতার ঘটনাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চিকে সসিংসতা বন্ধের পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান তিনি।

কুয়েতের প্রতিবাদ
মিয়ানমারের নৃশংসতা গণহত্যার সমান বলে মন্তব্য করেছেন কুয়েতের সংসদ সদস্যের একটি দল। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বর্বোরোচিতভাবে হত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের ‘লজ্জাজনক নিরবতা’র মধ্যে তারা এ ধরনের মন্তব্য করেন।

কুয়েতের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সংসদ সদস্যরা মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলো এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়া ও মিশরের প্রতিবাদ
মিয়ানমারে যে সহিংসতা চলছে তার বিরোধিতা করেছে রাশিয়া এবং মিসর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমারকে দু’দেশের তরফ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ব্রিকস সম্মেলনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, ‘আমরা যে কোনো সহিংসতার বিরোধী এবং মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

মিয়ানমারের সহিংসতার ঘটনায় মস্কোতে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে চলতি মাসের ৩ তারিখে শত শত মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। অপরদিকে, কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী চলতি মাসের ৪ তারিখে গ্রোজনি শহরে সমাবেশ করেছে।

আরব ইউনিয়ন এবং আরব পার্লামেন্টের প্রতিবাদ
অপরদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে বুধবার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব ইউনিয়ন এবং আরব পার্লামেন্ট।

লিখিত এক বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো হচ্ছে তা বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধান করে তাদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে আরব পার্লামেন্ট।

ইরানের প্রতিবাদ
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের আলেম গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি।

তিনি বলেছেন, এ অবস্থার অবসানে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের উগ্রবাদী বৌদ্ধদের বর্বতার বিষয়ে বিশ্বের নীরবতার সমালোচনা করে আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি বলেন, দেশটির বৌদ্ধরা মিয়ানমারকে মুসলিম-শূন্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এশিয়ার এই দেশটির মুসলমানদের ওপর গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নীরবতারও সমালোচনা করেন ইরানের এ শীর্ষস্থানীয় আলেম। তিনি বলেন, যদি ওআইসি রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা করে তাহলে আন্তর্জাতিক অন্য সংস্থাগুলোও সক্রিয় হতে বাধ্য হবে।

এছাড়া প্রতিবাদ জানিয়েয়ে আরও একাধিক দেশ।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ পুলিশ নিহতের পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কঠোর অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সহিংসতায় রাখাইনে অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত ১২ দিনে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে একই ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেসময়ও রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। দুই দফার এ সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে বাড়ি-ঘর ধ্বংস ও অত্যধিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। এই বিদ্রোহীরা রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

এ জাতীয় আরও খবর