জাতিসংঘের পুরস্কার পাচ্ছেন সোনিয়া বশির কবির

---
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : আগামী ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনাইটেড ন্যাশনস গ্লোবাল কম্প্যাক্ট লিডারস সামিট ২০১৭। সামিটে টেকসই লক্ষমাত্রা অর্জন ক্যাটাগরিতে বিশ্বব্যাপী ১০জনকে পুরস্কারে ভূষিত করা হবে।
নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে টেকসই উন্নয়ন এবং ১৭ টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষে বিজনেস কমিউনিটিকে বিভিন্ন জায়গায় কার্যকরভাবে কাজে লাগানোয় ১০জনকে সম্মানিত করা হবে। বিশ্বব্যাপী ১০জনের মাঝে এ খাতে এসডিজি নেতৃত্বদানকারী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির।
ইউএন গ্লোবাল ইম্প্যাক্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী পরিচালক লিজ কিংগো বলেন, ‘ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কিভাবে বিভিন্ন সমস্যা যেগুলোর সম্মুখিন আমাদের বর্তমানে হতে হচ্ছে, সেগুলো থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি এসডিজি ২০১৭ নেতৃত্বদানকারীদের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণে সোনিয়া বশির কবির হলেন বেশ প্রতিভাসম্পন্ন একজন নারী। ডিজিটাল স্বাক্ষরতা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।’
নারীদের ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখায় সোনিয়া বশির কবিরকে সম্মানসূচক এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রযুক্তি যে কোনো উন্নয়নশীল দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুতগতিতে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে শতকরা ৫০ ভাগ নারী। আর এ নারীরা দেশের অগ্রগতিতে শক্তিশালী হাতিয়ার।
নারীদের ডিজিটাল শিক্ষাদানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে মাইক্রোসফট বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী আমাদের প্রচেষ্টার গ্রহণযোগ্যতা, কৃতজ্ঞতা ও চাহিদা তৈরি হওয়ায় আমরা বেশ উচ্ছসিত, একই সঙ্গে ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো পেশাদার উপায়ে সাজানোর ব্যাপারে আমরা দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। নারীদের ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা সফলতার মুখ দেখেছি। সরকারের সহযোগিতায় আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ডিজিটাল অভ্যুথ্যানে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সোনিয়া বশির কবির।
প্রতিবছর এসডিজি নেতৃত্বদানকারীদের একটি দলকে নিয়ে বিশেষ দিন উদযাপন করে ইউএন গ্লোবাল কম্প্যাক্ট। বৈশ্বিক লক্ষমাত্রা অর্জনের লক্ষে এসকল ব্যবসায়িক নেতৃত্বদানকারীরা অসাধারন কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পুরো বিশ্ব থেকে শতাধিক মনোনয়নকারী থেকে মূল ১০জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বৈশ্বিক সামাজিক সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে নির্বাচিতরা। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ইউএন গ্লোবাল লিডারস সামিট ২০১৭-তে নির্বাচিতদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হবে।
জাতিসংঘ, অ্যাকাডেমিয়া, সিভিল সোসাইটি ও প্রাইভেট সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন পর্ষদ, যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ওপর ভিত্তি করে মনোনীতদের মধ্য থেকে মূল নির্বাচিতদের বাছাই করেছেন। ২০১৭ সালের এসডিজি নির্বাচিতদের সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট : www.unglobalcompact.org/sdgs/sdgpioneers।
সম্মাননা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সোনিয়া বশির কবির বলেন, ‘জাতিসংঘের গ্লোবাল কম্প্যাক্ট দল ২০১৭ সালের এসডিজি নেতৃত্বদানকারী হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করায় আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। প্রযুক্তিতে আমার দেশের নারীদের অনুপ্রাণীত ও সক্ষম করার ব্যাপারে আমি আগ্রহী এবং আমি নিশ্চিত যে, অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাত আগের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধাজনক ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ বিরাজ করছে, যা দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে।’
মানবাধিকার, শ্রম, পরিবেশ ও দুর্নীতি বিরোধী খাতের উন্নয়নে কৌশলগত ও পরিচালনা পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট টেকসই পদক্ষেপ ইউএন গ্লোবাল কম্প্যাক্ট পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাত সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ অর্জন করা সহজতর হয়ে যায়। বাংলাদেশে ৫৫টি প্রতিষ্ঠান ও অব্যবসায়িক সংস্থা এ পদক্ষেপের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে গ্লোবাল কম্প্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ গত ২০০৯ সাল থেকে টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরির লক্ষে সহযোগিতা করে আসছে।
প্রাইভেট সেক্টর, জাতিসংঘ, সরকারি ও সিভিল সোসাইটিকে নিয়ে দুই দিনব্যাপী দ্য ইউএন গ্লোবাল কম্প্যাক্ট লিডারস সামিট ২০১৭ অনুষ্ঠিত হবে। এ আয়োজনের লক্ষ একটাই, আর তা হলো আগামি ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জন। নতুন প্রজন্মের টেকসই উন্নয়নে ব্যবসায়িক কার্যক্রম, চিন্তা-চেতনা ও অভিনব পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে নিউইয়র্কে পুরো বিশ্ব থেকে জড়ো হবে ৮০০-এর বেশি নেতৃত্বদানকারীরা।
সোনিয়া বশির কবির সম্পর্কে কিছু তথ্য
সোনিয়া বশির কবির বর্তমানে মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি স্টার্টআপ ডি মানি-এর বোর্ড পরিচালক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। নারীদের ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষে নিঃস্বার্থভাবে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কাজ করছেন তিনি। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসার জন্য মাইক্রোসফটের মাধ্যমে নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে সহায়তা করছেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ইমপ্লয়য়ার্স ফাউন্ডেশনের সাবেক বোর্ড সদস্য এবং অলাভজনক পরামর্শ ও উদ্যোক্তা তৈরির প্রতিষ্ঠান টিআইই-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য গত ২০১৫ সালে তিন বছরের জন্য সোনিয়া বশির কবিরকে টেকনোলজি ব্যাংকের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন।
শিক্ষার রূপান্তরিত ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছেন সোনিয়া বশির কবির। তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর বোর্ড সদস্য, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ)-এর বিজনেস ও কম্পিউটার সায়েন্স স্কুলের বোর্ড সদস্য ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর বিজনেস স্কুলের বোর্ড সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন।