g লঞ্চের ধাক্কাধাক্কি | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ১৯শে ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

লঞ্চের ধাক্কাধাক্কি

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ৩০, ২০১৭

---

নিউজ ডেস্ক : সখিনা বিবির গ্রামের বাড়ি ভোলায়। ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য বিকেল চারটার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসেন তিনি। টার্মিনালের পন্টুনে ব্যাগপত্র নিয়ে স্বামী শাহ আলমের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ দেখেন, একটি লঞ্চের সঙ্গে আরেকটি লঞ্চকে ধাক্কা লেগেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর সামনের আরেকটি লঞ্চ পন্টুনে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে পন্টুনে থাকা অবস্থায় তিনি উল্টে পড়েন। একপর্যায়ে সখিনা বিবি ভয়ে কাঁদতে থাকেন। বলতে থাকেন, ‘জীবনে বহুবার লঞ্চে চড়ে ভোলায় গেছেন। কিন্তু লঞ্চে লঞ্চে এমন ধাক্কা জীবনে দেখেননি।’

দেখা গেল, কেবল সখিনা একা নন, লঞ্চের ধাক্কায় যখন পন্টুন দুলতে থাকে, তখন সেখানে অপেক্ষায় থাকা অন্তত এক শ যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেখানে উপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বলতে শোনা যায়, ‘অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলাম।’

ভোলাগামী এমভি ফারহান-৫ লঞ্চে তখন কয়েক শ যাত্রী। টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ঘাট ছাড়ার জন্য ইঞ্জিন চালু করেন চালক। পন্টুন থেকে কিছু দূর যেতে না যেতেই লঞ্চটির পূর্ব পাশে থাকা এমভি বালিয়ার সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। একপর্যায়ে লঞ্চটির কিছু অংশ ওই লঞ্চের ওপরে উঠে যায়। তখন এমভি ফারহান ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে। আবার পশ্চিম পাশে থাকা এমভি কর্ণফুলী-১ লঞ্চটির সঙ্গেও ধাক্কা লাগে। তখন কর্ণফুলী লঞ্চটির সঙ্গে পন্টুনের ধাক্কা লাগে।

পন্টুনে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা যখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তখন আবার দেখা গেল, কর্ণফুলী লঞ্চের লোকজন যাত্রীদের লঞ্চে তুলছিলেন। বুধবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচট পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এমন নানা চিত্র দেখা গেল। টার্মিনালে সকালে যাত্রীদের ভিড় ছিল না। অল্প যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়তে থাকে লঞ্চগুলো। তবে বেলা দুইটার পর থেকে দলে দলে যাত্রী আসতে থাকে টার্মিনালে। বিশেষ করে বিকেল চারটার পর টার্মিনালের পন্টুন কানায় কানায় ভরে যায়। আর বিকেল পাঁচটার যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় তৈরি হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটে ২০টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এরপর রাত নয়টা পর্যন্ত লঞ্চ ছাড়ে ৬৫টি।

লঞ্চের ছাদে যাত্রী বহন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। অথচ দেখা গেল, লঞ্চগুলোর ছাদে ছাদে যাত্রী। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়ছে লঞ্চগুলো। এমভি ইয়াদের ছাদের পুরো অংশজুড়ে ছিল যাত্রী। বিছানাপত্র নিয়ে যাত্রীরা যার যার জায়গায় শুয়ে-বসে ছিলেন। যাত্রীরা কেন ছাদে? এমন প্রশ্ন শুনে বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক হেদায়েত উল্লা বললেন, ‘বারবার মাইকিং করে আমরা বলছি, ছাদে যাত্রী নেওয়া যাবে না। যাত্রীরা ছাদে উঠবেন না। তারপরও যাত্রীরা ছাদে উঠছে।’

ঘাটে থাকা অবস্থায় লঞ্চগুলো কীভাবে ধাক্কা-ধাক্কি করছে? প্রকাশ্যে কীভাবে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ঘাট ছাড়ছে? নজরদারির পরও কেন ছাদে যাত্রী নিচ্ছে লঞ্চ? এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন জানালেন, বুধবার বিকেলে এমভি ফারহান-৫ লঞ্চ আরেকটি লঞ্চকে ধাক্কা দেওয়ায় এর চালককে জরিমানা করা হয়েছে। জয়নাল দাবি করলেন, কোনোভাবে লঞ্চের ছাদে যাত্রী বহন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও কেউ যদি যাত্রী বহন করে সেসব লঞ্চের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন হুঁশিয়ারি শোনানোর পর তিনি জানালেন, ছাদে যাত্রী নেওয়ার অভিযোগে গত ঈদে ২২টি লঞ্চের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

জরিমানা আদায়ের কথা জানেন না শিক্ষক ইউনুস আলী। আজ স্ত্রী আর ছোট্ট দুই সন্তান নিয়ে বিকেলে বরিশালগামী একটি লঞ্চে ওঠেন তিনি। গাজীপুরের একটি স্কুলের শিক্ষক ইউনুস বললেন, ‘অনেক আগে থেকে আমি প্রতিদিন পাঁচটি জাতীয় দৈনিক পড়ি। এটা আমার নেশা। পত্রিকার পাতায় যখন অতিরিক্ত যাত্রীর ছবি দেখি, তখন মনে হয়, এটা কীভাবে সম্ভব হয়। দেখার কি কেউ নেই?’ এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ইউনুস বললেন, ‘লঞ্চ দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। যখন লঞ্চে উঠি, তখন সেসব খবরের কথা মনে পড়ে। আমিও তো লঞ্চের যাত্রী।’

অতিরিক্ত যাত্রীসহ নানা কারণে প্রতিবছর নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। আট বছর আগে ২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর ঈদের আগে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়া কোকো-৪ ভোলার লালমোহন উপজেলার নাজিরপুরে তেঁতুলিয়া নদীতে ডুবে যায়। মারা যান ৮৩ জন। এর আগে ২০০৩ সালের ৮ জুলাই ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনায় ৩৬ শিশুসহ ৮০০ যাত্রী মারা যায়। ২০০০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঈদুল আজহার রাতে চাঁদপুরের মতলবে এমভি জলকপোত ও এমভি রাজহংসীর মধ্যে সংঘর্ষে মারা যায় ৩০২ জন যাত্রী।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৭ বছরে নৌযান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ২৩ জন।