g কীভাবে কাজ করে ‘সেক্স রোবট’? | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মঙ্গলবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ৪ঠা আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

কীভাবে কাজ করে ‘সেক্স রোবট’?

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ১২, ২০১৭
news-image

---

প্রযুক্তি মানুষের কোনও চাহিদা পূরণই বাকি রাখবে না। এই দুনিয়ায় সর্বশেষ সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সহজ করে বলা যায়, বুদ্ধিমান যন্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা। আর এই প্রচেষ্টায় সবচেয়ে এগিয়ে রোবট ইন্ডাস্ট্রি। বুদ্ধিমান রোবট তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন গবেষকরা। আর সেই রোবটের সঙ্গে প্রেম করতে পারবে মানুষ! এমনকি চাইলে স্থাপন করতে পারবে যৌন সম্পর্কও!

নাহ, মোটেও বাড়িয়ে বলছি না। হলিউডের দুটি সিনেমায় তো দেখা গেছে এমনই ঘটনা। ‘হার (Her)’ এবং ‘এক্স মেশিনা’ নামের ছবি দুটিতে প্রেম হয়েছে মানুষে রোবটে। যৌন সম্পর্কেও জড়িয়েছে তারা। তবে এটিই প্রথম নয়, গ্রিক রূপকথায়ও আছে এমন কল্প কাহিনী। সেখানেও দেখা যায়, সাইপ্রাস দ্বীপের ভাস্কর পিগম্যালিয়ন তার নিজের তৈরি করা একটি মূর্তির প্রেমে পড়ে যায়।

তবে এবার সিনেমার এসব কল্পকাহিনী আর রূপকথাই কি সত্য হতে চলেছে? খুব শিগিরই কি পাওয়া যাবে ভালোবাসার রোবটকে? এসব প্রশ্ন আজকাল ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মাথায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক মার্কিন বিশেষজ্ঞ ডেভিড লেভি তার ‘লাভ অ্যান্ড সেক্স উইদ রোবটস’ বইতে লিখেছেন ২০৫০ সালের মধ্যেই বিয়ে করার উপযোগী রোবট তৈরি করা সম্ভব হবে। তার কথার ওপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে, যৌনতা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন একটি বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে আমরা।

তবে বাস্তবতা একটু ভিন্ন। ব্যাপারটিকে যতটা সহজ ভাবা হয়, আসলে ততটা সহজ নয়। এ বিষয়ে গবেষণা যতই এগোচ্ছে, বিষয়টি ততই জটিল হয়ে যাচ্ছে। একদিকে তাদের অনুভূতিশীল করা যেমন কঠিন গবেষণার বিষয়, অপরদিকে এ খাতে বিনিয়োগে জটিলতা দূর করা আরো কঠিন।

এর আগে বোঝা দরকার ‘সেক্স রোবট’ বলতে আসলে কী বোঝায়। সেক্স রোবট হচ্ছে এমন রোবট যার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। এর ভেতর এমন ধরনের ডিভাইস স্থাপন করা আছে যার মাধ্যমে রোবটটি তার সঙ্গীর মধ্যে সত্যিকারের যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক শেলি রোনেন জানান, রোবটটি যাতে মানুষের মধ্যে যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে সেজন্য অনেক কিছুই ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে হয়তো তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কও স্থাপন করা যেতে পারে।

এসব আবিষ্কারের অনেক কিছুই সফলভাবে কাজে লাগানো গেছে, আবার অনেক কিছুই যায়নি। ২০০৯ সালে ‘রিয়েল টাচ’ নামের একটি ডিভাইস বাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যন্ত্রটির মাধ্যমে মানুষের সংবেদনকে জাগিয়ে তোলা যায়। এটি এক ধরনের ভার্চুয়াল যন্ত্র হলেও এর মাধ্যমে মানুষ সত্যিকারের অনুভূতি পেতে পারে। তবে যন্ত্রটির বিরুদ্ধে স্বত্ব সম্পর্কিত এক মামলার কারণে ২০১৩ সালে এটি বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়।

মানুষের যৌন অনুভূতি সম্পর্কিত এ ধরনের আরও কিছু যন্ত্র আবিষ্কৃত হলেও এখন পর্যন্ত এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ কোনো রোবট তৈরি সম্ভব হয়নি। সেক্স রোবট কথাটি শুনলেই বোঝা যায়, এটি হবে এমন এক ধরনের রোবট যা দেখতে হবে মানুষের মতো, থাকবে যৌন ক্ষমতা এবং চিন্তা করার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এখন পর্যন্ত এ বাজারে ধরনের কিছু পুতুল এসেছে। এগুলো তৈরি করেছে ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কোম্পানি অ্যাবাইস ক্রিয়েশনস। পুতুলগুলোকে বলা হয় ‘রিয়েল ডল’। মানুষের মতো করেই তৈরি করা হয়েছে রিয়েল ডলদের। তারা তাদের এই প্রতিষ্ঠানটিরও নাম দিয়েছেন রিয়েল ডল।

এসব পুতুলের জন্য আছে আলাদা চিকিৎসক। যাদের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত পুতুল মেরামত করা। তবে এগুলো খুবই ব্যয়বহুল। একেকটির দাম পাঁচ থেকে ১০ হাজার ডলারের মতো। এরপরও এগুলো সেক্স রোবট নয়। অন্তত এখন পর্যন্ত তেমনটি হয়ে উঠতে পারেনি। সেক্স রোবট তার ব্যবহারকারীর চোখ দেখেই বলে দিতে পারবে সে কী চায়। ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ আনন্দ দেয়ার শিক্ষাও দেয়া হয় এ রোবটকে। এমনকি ব্যবহারকারীর সাথে কথাও বলতে পারবে তারা।

সেক্স রোবট বিষয়ক সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিক এভি ফ্লক্স জানান, এটি কোনো পুতুলও নয়, কোনো যন্ত্রও নয়। ন্যানোপ্রযুক্তিতে কাজ করবে এসব রোবট। অনুভূতির জন্য এর থাকবে এক ধরনের কৃত্রিম ত্বক এবং ভাষা বোঝার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি সন্তুষ্ট করতে পারবে ব্যবহারকারীকে।

বর্তমানে বাজারে বিদ্যমান রিয়েল ডলগুলোর ওজন ৪৭ কেজির মতো। তবে এরা নিজেরা নিজেদের ভারসাম্য রাখতে পারে না। সেক্স রোবটরা হবে এর ব্যতিক্রম। তারা নিজের ক্ষমতায় শুধু দাঁড়াতেই পারবে না, ঘুরে বেড়াতে পারবে চারপাশে। প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।

২০১৫ সালের অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেক্স রোবটের জন্য কৃত্রিম এক ধরনের ত্বক তৈরি করেছেন তারা। তবে এগুলো সম্প্রসারণশীল নয়। তাছাড়া কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় এগুলো ভালো থাকবে তাও জানায়নি তারা।

 যৌনকর্মীদের রোজগারেও ভাগ বসাবে সেক্স রোবট!

রোবটটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এখন তারা কাজ করছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। তবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার কর্মীরা। এতে যৌনকর্মীদের আয় হারাতে হবে বলে আশঙ্কা তাদের। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যে সেক্স রোবটের বিরুদ্ধে ‘দ্য ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট সেক্স রোবট’ নামে একটি প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে। মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণের জন্য যায় যৌনকর্মীদের কাছে। যৌনতার বিনিময়ে উপার্জন করে এ পেশায় নিয়োজিতরা। এ ধরনের রোবট যদি আবিষ্কৃত হয় তবে মানুষ আর যৌনকর্মীদের কাছে যাবে না বলে আশঙ্কা অ্যামনেস্টির। এতে তাদের আয় কমে যাবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

এছাড়া রয়েছে আরো প্রতিবন্ধকতা। ব্যবসাটিতে বিনিয়োগে আগ্রহী নয় উদ্যোক্তারা। ঋণ দিতে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলোও। বরং অন্য খাতে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন তারা। এতে আছে নানা আইনি জটিলতা। তাছাড়া এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও আছে নানা সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অনলাইন বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোতে এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় না। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়াতে সেক্স রোবট বিষয়ে দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করলে তা নিয়ে আন্দোলন হতে পারে আশঙ্কায় পুলিশ সম্মেলনটি বন্ধ করে দেয়।

প্রথম দিকে সেক্স রোবটের ভবিষ্যত অনিশ্চিত মনে করা হয়েছিল। একদিকে তৈরির উচ্চ ব্যয়, অন্যদিকে নানা জটিলতায় এটি বাজারে আসতে পারবে না বলেই ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তবে হাল ছাড়েনি অ্যাবাইস ক্রিয়েশনস। গত ২০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে তারা। রিয়েল ডলকে তারা সেক্স রোবটে পরিণত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা মেয়ে আকৃতির ‘হারমনি’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি সেক্স রোবট নির্মাণ করেছে।

সম্প্রতি হারমনি নামের এই রোবটটি তৈরি করেছে অ্যাবাইস ক্রিয়েশনস 

হারমনি নাচতে পারে, আবেদময়ী ভঙ্গিতে তাকাতে পারে, এমনকী আপনাকে ভ্রুকুটিও করতে পারবে সে। গল্প করার ক্ষমতাও আছে এই রোবটের। মিউজিক, মুভি এবং বই নিয়ে সে গল্প করবে। কৌতুকও বলতে পারে এই যন্ত্রমানবী। মনে রাখতে পারবে আপনার জন্মদিন। শুধু তাই না, আপনি কী খেতে পছন্দ করেন, আপনার ভাইবোনের নাম- এসবও নখদর্পণে থাকবে হারমনির। আর সঙ্গে যখন খুশি তখন যৌনতা তো থাকছেই। এরপরও এটিকে এখন পর্যন্ত ঠিক ‘সেক্স রোবটে’ রূপ দেয়া যায়নি।

বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে