এবার উচ্চতর গণিতের হুবহু প্রশ্ন ফাঁস
নিজস্ব প্রতিবেদক : বেশ কিছু প্রাইভেটকার রাস্তার পাশে পার্ক করা। প্রতিটিতে চার-পাঁচজন করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মনোযোগ সহকারে কী যেন দেখছেন। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে গ্রুপ স্টাডি করছেন তারা। তবে কাছে গিয়ে দেখা যায়, মোবাইলে এইচএসসি উচ্চতর গণিত দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্র এসেছে। আর সেগুলোর সমাধানেই ব্যস্ত তারা। শনিবার পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকেই এই চিত্র ছিল রাজধানীর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভেতরের রাস্তাগুলোয়। একই চিত্র ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের গেস্ট রুম ও ক্যান্টিনে।
উচ্চতর গণিত দ্বিতীয়পত্রের ‘খ’সেটের হুবহু প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে তাদের কাছে। আর সেগুলোর সমাধান করছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে থাকা সলভাররা (সমাধানকারী)। পরবর্তীতে দুপুর ১টার পর পরীক্ষা শেষে প্রশ্ন মিলিয়ে দেখা যায়, বুয়েটের ক্যাম্পাসে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মোবাইলে যে প্রশ্নপত্র পাওয়া গিয়েছিল, সেই একই প্রশ্নে পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর পর যে প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর কথা, সেই একই প্রশ্ন পেয়েছেন অন্তত দুই ঘণ্টা আগে।
বুয়েটের নজরুল হলের ক্যান্টিনে পেছনের কোনায় একটি টেবিলে বসে দুইজন পরীক্ষার্থীকে নিয়ে প্রশ্নের সমাধান করে দিচ্ছিলেন বুয়েটের সিএসসি’র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব। তাদের জিজ্ঞাসা করলে জানান, তারা শেষ মুহূর্তের কিছু সমাধান করে দিচ্ছেন। কিন্তু পরবর্তীতে বুয়েটের ওই শিক্ষার্থীর মোবাইলে ‘হোয়াটস আপ’অ্যাপসে পাওয়া যায় উচ্চতর গণিত দ্বিতীয় পত্র ‘খ’সেটের প্রশ্ন, যা দেখে তার সঙ্গে থাকা পরীক্ষার্থীকে সমাধান করে দিচ্ছিলেন। সঙ্গে ওই পরীক্ষার্থীর অভিভাবককেও বসে থাকতে দেখা গেছে।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কী সমাধান করছেন জানতে চাইলে পরীক্ষার্থী দৌড়ে পালিয়ে যান। শুরুতে কী করা হচ্ছিল তার উত্তর না দিলেও পরবর্তীতে জানান, তারা প্রশ্ন পেয়েছেন এবং সেই প্রশ্নের সমাধান করা হচ্ছিল। ‘হোয়াটস আপ’অ্যাপসে পাওয়া ম্যাসেজে দেখা গেছে, প্রশ্নপত্র তার কাছে এসেছে সকাল ৮টার কিছু সময় পর।
একই অবস্থা ছিল তিতুমীর হলের গেস্টরুমে। সেখানে পাওয়া যায়, ছয়জন পরীক্ষার্থী ও একজন সলভার। তারাও মোবাইলে পাওয়া প্রশ্নের সমাধান করছিলেন। রুমে ঢোকার পর পরীক্ষার্থীরা পালিয়ে যান। কিন্তু তাদের সামনে রাখা খাতায় দেখা গেছে, কিছু প্রশ্নের সমাধান করছিলেন তারা।
সলভার জানান, গাজীপুরের একটি কলেজে পড়েন তিনি। একজন পরীক্ষার্থীর বড় ভাই। তাদের কিছু সমাধান করে দিচ্ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ রশীদ হলের গেস্ট রুমে পাওয়া যায় আরও একটি পরীক্ষার্থীদের গ্রুপ। তাদের হাতেও পাওয়া যায় ‘খ’সেটের প্রশ্ন। আর এই প্রশ্নে সমাধান করে দিচ্ছিলেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোসান্নেক আলী।
ফাঁস করা প্রশ্নপত্র সমাধানের সময় কেন বিরক্ত করা হলো, এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হন ওই পরীক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা অভিভাবক। তিনি বলেন, এখানে আসছেন কেন? মন্ত্রীকে গিয়ে ধরেন। প্রশ্ন ফাঁস হলে সেটা পাওয়াতো অন্যায় না। এনিয়ে উপস্থিত বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় ওই অভিভাবকের।
এদিকে রাস্তায় থাকা গাড়িগুলোকে ক্যামেরা দেখে দ্রুত এলাকা ছাড়তে দেখা যায়। এর মধ্যে একটি গাড়ির ভেতরে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. আবিদ হাসান মিজু প্রশ্নের সমাধান করে দিচ্ছেন। তার ফোনেও ‘খ’সেটের প্রশ্ন পাওয়া যায়, যে প্রশ্নে পরবর্তীতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারটি অস্বীকার করেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস অসম্ভব। এটা হতেই পারে না। এমসিকিউ ফাঁস হয়েছে শুনেছি, তাও কয়েক মিনিট দশেক আগে।’