হেফাজত রাজনীতিতে জড়াবে না, ভোটেও সমর্থন দেবে না
---
নিউজ ডেস্ক : হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম সাংগঠনিকভাবে কখনোই রাজনীতিতে জড়াবে না, ভোটের রাজনীতিতে কাউকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থনও জোগাবে না।
কিন্তু কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার পর হেফাজতে ইসলামকে কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে একাকার করে বিদ্বেষমূলক নানা মিথ্যা কাহিনী ফেঁদে ঈমান-আকিদাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠনটিকে রাজনৈতিক রূপদানের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে কোনো কোনো মিডিয়া।
ব্যক্তিগতভাবে আমার নামেও মিথ্যা গল্প তৈরি করছে। তিনি বলেন, স্কুলের পাঠ্যবই, গ্রিক দেবী থেমিস ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসঙ্গে সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে রুষ্ট হয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা থেকেই এসব করা হচ্ছে। শনিবার রাত সোয়া ৮টায় এক বিবৃতিতে হেফাজত আমীর এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন হেফাজত আমীরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, একদিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা পদ্ধতির ছিদ্রান্বেষণে হাস্যকর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছে এ মহলটি। অন্যদিকে সিলেবাস নিয়ে অমূলক প্রশ্ন তুলছে এবং কওমি সনদের মানদণ্ড নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিগুলোকে ভিত্তি ধরে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান করায় বাম সেকুলারপন্থী গোষ্ঠী ও ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়াগুলোর গায়ে জ্বালা ধরেছে বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, কওমি মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি উচ্চতর আরবি ভাষাজ্ঞান ও পবিত্র কোরআন-হাদিসের সর্বোচ্চ স্তরের মৌলিক শিক্ষা দেয়া হয়। পূর্বসূরি বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ব্যাপক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই কওমি মাদ্রাসার জন্য মানোত্তীর্ণ সিলেবাস প্রণয়ন করেছেন। তিনি বলেন, কোরআন-হাদিস ও ইসলামী জ্ঞানে পাণ্ডিত্য রাখা একজন বিজ্ঞ আলেম ছাড়া কওমি শিক্ষার মান নিয়ে বাইরের কারও মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা কখনোই যথার্থ হবে না। যেমন মেডিকেল শিক্ষার পদ্ধতি নিয়ে একজন প্রকৌশলী বা আলেমের পর্যালোচনা যথার্থ হওয়ার কথা নয়।
হেফাজত আমীর বলেন, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার নানা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনে সময় এবং পদ্ধতিগত তারতম্য থাকাটা স্বাভাবিক। কোন কোন বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করতে কত বছর সময় লাগবে, সেটা সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিজ্ঞজনরাই গবেষণা করে নির্ধারণ করে থাকেন। সব বিভাগে পৃথক পৃথকভাবে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত পাঠদানের সময় তো একরকম হয় না। তিনি বলেন, যারা কওমি সিলেবাস ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, মূলত তারা ধারাবাহিকভাবে ইসলামী আকিদা-বিশ্বাসের নানা দিক এবং মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অপপ্রচার ও কটূক্তির জন্য আগে থেকেই পরিচিত। তারা অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই এসব প্রশ্ন তুলে থাকতে পারেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ভোগবাদী চিন্তা থেকে তারা মনে করেন, শিক্ষাকে হতে হবে টাকা উপার্জনের উপায়। অর্থাৎ, টাকা কামানোই হবে শিক্ষার লক্ষ্য- এ ছাড়া শিক্ষার আর কোনো ভূমিকা থাকতে পারবে না। এমন ভোগবাদী চিন্তা থেকেই তাদের মানসিক, আত্মিক কিংবা প্রজ্ঞার বিকাশ ঘটানোর কারণে তারা ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে ঘোরতর বিরোধিতা শুরু করে।
তিনি বলেন, ভোগবাদীরা এমন শিক্ষাব্যবস্থার বিস্তার ঘটাতে চায়, যা দিয়ে সে ফ কলকারখানা কিংবা তাদের ব্যবসার জন্য শ্রমিক, কর্মকর্তা তৈরি হয়। তারা তখন আধ্যাত্মিক শিক্ষা তথা আধ্যাত্মিক, নৈতিক কিংবা দার্শনিক শিক্ষা- যাকে এখনও পাশ্চাত্যে ‘লিবারেল এডুকেশন’ বলা হয়, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। তারা দাবি করে, আমাদের কোনো আধ্যাত্মিক শিক্ষার দরকার নেই। ধর্ম শিক্ষার তো প্রশ্নই আসে না। নীতিবিদ্যা পাঠ করা কিংবা নৈতিক শিক্ষারও বা কী দরকার?
হেফাজত আমীর বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থায় কখনও শিক্ষার্থীদের অন্যের গোলামি করার বা শ্রমের বাজারে সস্তা শ্রমিক হিসেবে নিজেকে বেচা-বিক্রি করার শিক্ষা দেয় না। মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধিতা করতে গিয়ে এ ভোগবাদীরা ভুলে যায় যে, ধর্মশিক্ষা ও ধর্মচর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইসলাম যেহেতু মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব গণ্য করে এবং মানুষ আল্লাহর খলিফা হিসেবেই ইহলৌকিক জগতে হাজির। অতএব প্রতিটি মানুষের এমন কিছু আধ্যাত্মিক গুণ রয়েছে, যার বিকাশ ঘটানোই শিক্ষার কাজ। যুগান্তর