ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তলিয়ে গেছে বিল দিশেহারা কৃষক
---
নিজস্ব প্রতিনিধি : অতিরিক্ত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরামপুরের বারো আউলিয়া বিলের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারিভাবে করা ক্ষতির তালিকায় নাম নেই সুলতানপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের এ বিলের। কেউ খোঁজও নেয়নি এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। সরকারি হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। বিরামপুরের বার আউলিয়া বিলে অন্য বছর এসময় ট্রাকটর-ভ্যানগাড়ির ভিড় থাকত। জমি থেকে ফসল কেটে এসব যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো কৃষকের বাড়িতে। এবারের দৃশ্য অন্য রকম। যেন সাগর হয়ে উঠেছে বার আউলিয়ার বিল। তারপরও কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ফসল কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন দিশেহারা কৃষকদের কেউ কেউ। সরেজমিন গেলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। বিলের দক্ষিণ পাশের উজানে গোয়াবিল। এই বিলের জমিগুলোতে পানি না উঠলেও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আগামই চলছে ধানকাটা।
বার আউলিয়া বিলে ৯ কানি জমির মালিক আসাদ মিয়া। তার সব জমির ফসলই গ্রাস করেছে পানি। একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারেননি সে। বিলের পাড়েই দিনভর ঘুরে বেড়ান তিনি, পানি কমলে কিছু ফসল যদি বাঁচানো যায় সে আশায়। কিভাবে চলবে তার সংসার তা ভেবেই দিশেহারা আসাদ। বলেন, সাত-আট দিন ধরে এমনভাবে বৃষ্টি হতে আমার জীবনে দেখিনি। জোয়ারের পানি হলে কিছু ফসল কাটতে পারতাম। কিন্তু দিনরাত সমানে বৃষ্টির কারণে তা পারিনি। শুধু আসাদ নয়, বিরামপুর গ্রামের আবদুল আলিম ভূঁইয়া, শাহআলম, ইয়াছিন মিয়া, আশরাফ উদ্দিন, সোনা মিয়া, ইউনুস মিয়া, হারিছ মিয়া, কবির মিয়াÑ সবার দশা একই। তাদের প্রত্যেকেই পাঁচ থেকে ২০ কানি করে জমির ফসল হারিয়েছেন। কিছু জমির ধান কাটতে পারলেও সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। আছে তাদের ঋণ পরিশোধের চিন্তাও।
হারিছ মিয়া জানান- তার চার কানি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার নিজের কোন জমি নেই। বর্গা নেয়া জমিতে ব্যাংক থেকে আনা ঋনে ফসল লাগিয়েছিলেন। আলমগীর মিয়ার নষ্ট হয়েছে ৩ কানি জমির ধান। তিনি জানান, কিছু ধান কাটতে পেরেছিলেন। নৌকায় করে সেগুলো নিয়ে আসার পথে নৌকা উল্টে গিয়ে তাও শেষ হয়ে যায়। নৌকা বোঝাই ধান তলিয়ে যায় পানিতে। আবদুল আলিম ভূইয়া তারা ১৯ কানি জমিতে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধান লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে বিআর-২৮ ধান হাবুডুবু করে কেটে বাড়ি এনে তুলেছেন। কিন্তু ৮ কানিতে লাগানো বিআর-২৯ ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। বিরামপুর গ্রামের ইয়াছিন মিয়া জানান, সবার ধানই পইচ্চা সাফ হইয়া গেছে। তার নিজের ক্ষতিও অনেক। তিনি বলেন, সরকার সাহায্য করলে সুবিধা হবে। যারা জমি চাষ করেছে প্রত্যেকের নামে এনজিওর ঋন আছে। ফসলের এই অবস্থা হলেও এনজিওর লোকজন টাইম টু টাইম এসে ধর্না দিচ্ছে বলে জানান ইয়াছিন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ক্ষতির তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর, মাছিহাতা, রামরাইল, বাসুদেব ও পৌর এলাকার ১৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নাম নেই সুলতানপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা অভিযোগ করেন, তাদের খোঁজখবর নিতে কেউই আসেনি। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউই না।
ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোর মধ্যে নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড়, ভলাকুট, কুন্ডা, গোয়ালনগর, নাসিরনগর, বুড়িশ্বর, গোকর্ন, পূর্বভাগ, হরিপুর ও গুনিয়াউক ইউনিয়নের ৩৩১০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিজয়নগরের চর-ইসলামপুর, পত্তন, হরষপুর, বুধন্তী, চান্দুরা ও চম্পকনগর ইউনিয়নের ৯৯০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঞ্ছারামপুরের মানিকপুর, আইয়ুবপুর, সদর, ছয়ফুল্লাহকান্দি ও উজানচরের ৮০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: আবু নাছের জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির কাজ চলছে এখনো। পানি আরো বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় কৃষকদের আগাম ফসল কাটার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।