হাওরে মাছ বিনষ্ট ১২৭৬ মেট্রিক টন, হাঁস মরেছে ৩৮৪৪টি
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে হাওর প্লাবিত হওয়ায় এখন পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন মাছ বিনষ্ট ও ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে উজানে ভারতের মেঘালয়ে রানিকোর নদী অববাহিকায় মাছ ও হাঁস মরছে। এরই প্রেক্ষিতে সরকার হাওর এলাকায় ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে যারা পানি পরীক্ষা করে দেখছেন তাতে ইউরেনিয়াম রয়েছে কি না। মৎস বিভাগ শনিবার জানায় হাওয়ার এলাকায় ৮’শ টন মাছ মারা গেছে। যার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওরগুলো ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হচ্ছে এবং ওই এলাকার অদূরেই রানিকোর নদী অববাহিকা অবস্থিত।
সুনামগঞ্জ হাওর এলাকার শেষ মাথায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের খাসিয়া উপজাতিরা বাস করে। খাসিয়াদের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে তারা সন্দেহ করছে যে, ভারতের খোলা ইউরেনিয়াম খনির ১৫’শ গর্ত থেকে ইউরেনিয়াম পানির সঙ্গে মিশে নদী দূষণ করছে যার ফলে মাছ ও হাঁস মারা যাচ্ছে।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। ওই সভা শেষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ বলেন, ‘বন্যায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যেখান থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যেতো। তবে এতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি হবে না। কারণ, দেশের অন্য অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন বেশি হয়েছে। এছাড়া আউশ এবং আমন চাষে আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দেবো। ফলে দেশে খাদ্যে কোনও ঘাটতি থাকবে না।’
সভা শেষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, ‘হাওর এলাকায় বাঁধগুলো ষাটের দশকের পরিকল্পনায় করা। এবারের বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। এবারের ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নেবো বাঁধগুলো কী পরিমাণ উঁচু করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পগুলো উপজেলা পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন করবে উপজেলা প্রশাসন।’
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বন্যকবলিত এলাকার মানুষদের সহায়তায় সোমবার থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। পরবর্তী একশ’ দিনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে মাসে ত্রিশ কেজি চাল এবং নগদ ৫শ’ টাকা দেওয়া হবে। তিনি এ অকাল বন্যায় হাওর এলাকার ৮৬ শতাংশ বোরো ধানই নষ্ট হয়েছে বলেও জানান।
মায়া আরও বলেন, ‘এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাবেন তিন লাখ ত্রিশ হাজার পরিবার। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ কর্মসূচিতে সরকারের ৩০/৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে যারা ত্রাণ নেবেন না তাদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে চাল ও ১০ টাকা কেজি দরে নায্যমূল্যে চাল বিক্রি অব্যাহত থাকবে।’