এক বছরেও বিচার শুরু হয়নি শিক্ষক রেজাউল হত্যার
রাজশাহী প্রতিনিধি : এক বছর পার হলেও প্রিয় শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার বিচার শুরু হতে দেখেননি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা দ্রুত বিচার শুরু এবং হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ, র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
আজ রোববার শিক্ষক হত্যার এক বছর পূর্তিতে ইংরেজি বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
এই মামলার প্রধান আসামি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল পলাতক। মামলাটি এখন অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় আছে।
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ্ বলেন, ‘রেজাউল স্যার একজন মুক্তমনা মানুষ ছিলেন। সংস্কৃতিচর্চায় একজন নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন তিনি। সেই স্যারকে এভাবে হত্যা করা হবে আমরা ভাবিনি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের একটি অভিযোগপত্র দিতে দেখেছি। কিন্তু চূড়ান্ত পরিণতিতে বিচারকার্য এগিয়ে নিতে দেখি না। মামলায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। কেননা, আমরা খুনিদের ফাঁসি দেখতে চাই।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ্ আজম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে পারছে না। কেননা, তারা তাদের প্রিয় শিক্ষক হত্যার বিচার এখনো দেখতে পায়নি।’
ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাসউদ আখতার বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট দেওয়া হলেও এখনো বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আশা করব, বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে।’
শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি জঙ্গি হামলা হয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি শিক্ষক মারা গেছেন। নিয়মিত বিরতিতে এই শিক্ষক হত্যা বন্ধ করতে চাই।’
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ক্যাম্পাসে র্যালি বের করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। র্যালি শেষে প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চে সমাবেশ করেন তাঁরা। সেখানেই বক্তারা এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ ও ইংরেজি বিভাগ ব্যানার নিয়ে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে। মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত বিচারকাজ শেষ করে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দেয় ইংরেজি বিভাগ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘পুলিশের ভাষ্যমতে মূল পরিকল্পনাকারীকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ঠিক কী কারণে, কীভাবে এবং কেন এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তাও আমাদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। ফলে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অস্বস্তি এবং শঙ্কা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। তাই আপনার কাছে আমাদের দাবি, দোষীদের বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় এনে এবং বিচারিক কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে বিদ্যাচর্চার সঠিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
নগরের শালবাগানে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর বাসভবনে বাদ আসর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার অদূরে গলা কেটে হত্যা করা হয় অধ্যাপক রেজাউলকে। ওই দিন বিকেলে ওই শিক্ষকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আট জেএমবি সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক। আটজনের মধ্যে তিনজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। চারজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। মূল আসামি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল পলাতক। মামলাটি বর্তমানে অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় আছে।