ডোনাল্ড ট্রাম্প : নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন
নির্বাচনি প্রচারণার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিষয়ে যদি কেউ রেকর্ড করে থাকেন তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি প্রধান ইস্যুতেই নিজের কথার উল্টো পথে হাঁটছেন টিভি উপস্থাপক থেকে যুদ্ধপ্রেমি ও অস্থির প্রেসিডেন্টে পরিণত হওয়া ট্রাম্প।
নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্পের কণ্ঠে কোনো দেশের ওপর হস্তক্ষেপ বিরোধী অবস্থান, রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক, চীনের প্রতি বিদ্বেষ, ন্যাটো বিরোধী কথাবার্তা ও আমেরিকা ফার্স্ট নীতিগুলো প্রাধান্য পায়। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মাথায় ট্রাম্প তার সুর বদলে ফেলেছেন।
নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প ন্যাটোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ন্যাটো এখন আর বাতিল নয়। এছাড়াও ন্যাটোর গুরুত্বের কথা বলেন তিনি। নির্বাচনে একক আমেরিকার কথা বললেও এখন তিনি মিত্রদের সঙ্গে সব কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন অব্যাহত রাখবে। অথচ সিরিয়াতে রাসায়নিক হামলার পর ট্রাম্প বাশার আল আসাদ সরকারের বিমান ঘাঁটির ওপর ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেন। এরপরপরই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা ফুটে ওঠে। অথচ ২০১৩ সালে ট্রাম্প সিরিয়াতে সেনা পাঠিয়ে দেশটির ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেন। টুইটে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা, আক্রমণ করবেন না। আগে নিজের শক্তি রক্ষা করুন। বর্তমানে ট্রাম্প মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সিরিয়াতে বাশার আল আসাদ সরকারের ওপর সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সিরিয়ার অন্যতম মিত্র রাশিয়ার ভেটোর কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
নির্বাচনের সময় ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে সমালোচিত হন। কয়েক দিন আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার প্রতি রাশিয়ার সমর্থন দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প আরো বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালও হতে পারে খারাপও হতে পারে।
নির্বাচনের সময় চীনকে মুদ্রা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের জন্য বড় হুমকি বলে গণ্য করেছিলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর ট্রাম্প বলেন, চীন মুদ্রা নিয়ে কোন প্রতারণা করছে না। চীনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কেরও বার্তা দেন তিনি।
নির্বাচনি প্রচারণায় যুদ্ধবিরোধি অবস্থান ও নিজের দেশের সেনাবাহিনীকে অন্য দেশে পাঠানোর বিরোধী ছিলেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে ‘মাদার অব অল বোম’ নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প এই হামলার প্রশংসা করে বলেন, আমরা সামরিক বাহিনী নিয়ে গর্বিত ও সফল।
মার্কিন সাংবাদিক ক্ল্যারি বার্নিশ বলেন, ‘ট্রাম্প হস্তক্ষেপবিরোধী অবস্থানের কথা বললেও তার সংজ্ঞা বলতে তিনি কি বুঝেন সেটি বোঝা মুশকিল। তবে ভুলে গেলে চলবে না এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাহির থেকে যাই দেখা যাক না কেন এর শেষটা হচ্ছে যুদ্ধের ব্যবসা।’
বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে ক্ল্যারির কথার সত্যতা উপলদ্ধি করা যায়। সিরিয়াতে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, আফগানিস্তানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বোমা হামলা, বিপুল পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশ উত্তর কোরিয়ার উপদ্বীপের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজের অবস্থান থেকে বোঝা যায় ট্রাম্প যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বাহিরে নন। যদিও প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত মতের গুরুত্ব আছে। এছাড়া ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির আগ্রাসন ও যুদ্ধপ্রেমি নীতি সুষ্পষ্ট।
সূত্র: এনপিআর ও এক্টিভিস্ট পোস্ট.কম অবলম্বনে