অনলাইনে ভাইরাল ‘দম্পতি ভাইবোন’ সংবাদটি সত্য নয়!
অনলাইন ডেস্ক : সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদ অনেকেরই বেশ মনোযোগ কেড়েছে। এতে বলা হয়, এক দম্পতির সন্তান না হওয়ায় তারা চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন সন্তানের জন্য। এ সময় রুটিন শারীরিক চিকিৎসায় জানা যায়, স্বামী-স্ত্রীর ডিএনএ প্রায় হুবহু মিলে যাচ্ছে। এ সময় চিকিৎসকরা জানান তারা বাস্তবে যমজ ভাই-বোন। যদিও ফক্স নিউজ জানিয়েছে এ সংবাদটির সত্যতা নেই।
ভুল সংবাদটি যেভাবে পরিবেশিত হয়েছে
মার্কিন একটি ভুয়া সংবাদমাধ্যম এই ভুল সংবাদটির ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছে। বলা হচ্ছে ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপির। তরুণ-তরুণীর আলাপ হয়েছিল কলেজে গিয়ে। দুই জনে দুই জনের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই থেকেই প্রেম এবং বিয়ে। দুই জনের চেহারার মিল দেখে পরিচিতরা, বন্ধু-বান্ধবরা রসিকতাও করতেন। কিন্তু সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানিয়ছেন, ওই দম্পতি যমজ ভাই-বোন।
এতে আরও জানানো হয়, মিসিসিপির যে ফার্টিলিটি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন দম্পতি, সেই ক্লিনিকের ডাক্তার জানিয়েছেন, দুই জনের ডিএনএ-র মধ্যে অদ্ভুত মিল দেখে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনিই বিষয়টি চিকিৎসকের নজরে আনেন। চিকিৎসকের নাম প্রকাশ করেনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম। কিন্তু তাঁকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, দুই জনের ডিএনএ দেখে চিকিৎসকের মনে হয়েছিল, তাঁরা নিশ্চয়ই পরস্পরের তুতো ভাই-বোন হবেন। না হলে দুই জনের ডিএনএ-তে এত মিল থাকা সম্ভব নয়। হয়ত দূর সম্পর্কের ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের কথা মাঝে-মধ্যে শোনা যায়। সেই কারণেই চিকিৎসক সে রকম ভেবেছিলেন। কিন্তু পরের চেক-আপের তারিখে ওই দম্পতি ক্লিনিকে যাওয়ার পর চিকিৎসকদের ভুল ভাঙে।
সংবাদটিতে আরও বলা হয়, চিকিৎসক দুই জনের পরিচয়ের শিকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। শিকড়ে পৌঁছে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে চিকিৎসক নিজে তো বটেই, ওই দম্পতিও আশ্চর্য হয়ে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ১৯৮৪ সালে একই মায়ের গর্ভ থেকে ওই দুই জনের জন্ম। কিন্তু তাঁদের শৈশবেই তাঁদের বাবা-মা একটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। আত্মীয় পরিজনদের কেউই ওই দুই অনাথ শিশুর দায়িত্ব নেননি। তাই দায়িত্ব নেয় সরকার।
পরে সরকারি শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র থেকে দুটি আলাদা পরিবার ওই দুই শিশুকে দত্তক নেয়। সেখানেই তারা বড় হয়। কোনও যমজ ভাই-বোনের এক জনকে যে দত্তক দেওয়া হচ্ছে, দুই পরিবারের কোনওটিকেই তা জানানো হয়নি। ভাই-বোন জানতেন যে তাঁদের দত্তক নেওয়া হয়েছিল। যে বাবা-মা তাঁদের জন্ম দিয়েছিলেন, তাঁরা যে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন, তাও সম্ভবত তাঁরা জানতেন। কিন্তু তরুণী জানতেন না, তাঁর একটি যমজ ভাইও ছিল। তরুণ জানতেন না, তাঁর একটি যমজ বোনও ছিল।
ভুয়া সংবাদটির উৎস
মিসিসিপি হেরাল্ড নামে একটি ওয়েবসাইট প্রথম এ ভাই-বোনের দম্পতি হওয়ার সংবাদটি প্রকাশ করে। যদিও এটি কোনো সংবাদমাধ্যম নয় বরং একটি ভুয়া সংবাদের ওয়েবসাইট। তবে যে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির কাছে এ সংবাদমাধ্যমটি সঠিক বলে মনে হতে পারে।
ভুয়া এ সংবাদমাধ্যমটির এ সংবাদটি পরবর্তীতে কয়েকটি বড় সংবাদমাধ্যম সংগ্রহ করে এবং কোনো যাচাই না করেই প্রকাশ করে দেয়। এর মধ্যে ছিল দ্য সানও। ফলে সেখান থেকে অনুবাদ করে কিংবা নিজের ভাষায় সাজিয়ে বিশ্বের নানা দেশের সংবাদমাধ্যম এ সংবাদটি প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে এ সংবাদটির বিষয়ে আরও কিছু সাংবাদিক তথ্য অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে। অনুসন্ধানে কোনো বাস্তব তথ্য না মেলায় ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে আসে যে সংবাদটির কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু ততক্ষণে বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভুয়া সংবাদটি।
এ সংবাদটিকে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কিভাবে এ ধরনের ভুয়া সংবাদ ছড়ানো ঠেকানো যায়, তা নিয়ে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
মূলত বিশ্বের নানা দেশে সংবাদপত্রের মতো করেই সংবাদ পরিবেশন করছে বেশ কিছু ওয়েবসাইট। যে সাইটগুলো মূলত সংবাদমাধ্যম নয়। নানা স্থান থেকে সংবাদ কপি করে নেওয়াই তাদের কাজ। যাচাই-বাছাই ছাড়াই তারা সংবাদ পরিবেশন করে। ফলে পাঠকের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না যে, কোনটি আসল ও কোনটি নকল সংবাদ। এক্ষেত্রে অনেকেই বলছেন, ভুয়া সংবাদের দৈরাত্ম ঠেকাতে পাঠকের উচিত গ্রহণযোগ্য সংবাদমাধ্যম থেকে সংবাদ পাঠ করা।