বৃহস্পতিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০১৭ ইং ৭ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ চাহিদা কমেছে ইলিশের

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ১৪, ২০১৭

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীতে হঠাৎ কমেছে ইলিশের চাহিদা। কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটসহ রাজধানীর সুপার শপগুলোতে ইলিশের চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে। একইভাবে কমেছে ইলিশের দামও। দুই দিন আগেও যে দামে বিক্রি হয়েছে এখন সেখানে ইলিশপ্রতি দাম কমেছে ১০০ টাকা। তারপরও মিলছে না ক্রেতা। এ কারণে যারা এবারের বৈশাখে ইলিশের রমরমা ব্যবসা করবেন ভেবেছিলেন তারা এখন উল্টো লোকসানের আশঙ্কায় আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর বিভিন্ন কারণে ইলিশের চাহিদা অন্য যে কোনও সময়ের তুলনায় কম। এবার ভরা মৌসুমে ব্যাপক পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে। তাই দামও নেমে আসে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার নাগালে। তখন অনেকে ইলিশ কিনে সংরক্ষণ করেন। প্রথমত এ কারণেই এবার শুরু থেকে চাহিদা আগের তুলনায় অনেক কম।

এছাড়া পহেলা বৈশাখে দেশবাসীকে পান্তার সঙ্গে ইলিশ মাছ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সাংবাদিকদের বৃহৎ দুটি প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই এবার পহেলা বৈশাখের খাবারের মেন্যু থেকে ইলিশ মাছ বাদ দিয়েছে।

ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে গত ১১ এপ্রিল গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পহেলা বৈশাখে খাবার মেন্যুতে ইলিশের বদলে খিচুড়ি, সবজি, ডিম ভাজা, মরিচ ভাজা, বেগুন ভাজা রাখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই বাজারে ইলিশের চাহিদা ব্যাপক হারে কমতে থাকে। তবে অনেকের অভিযোগ— যে হারে চাহিদা কমেছে, সে অনুযায়ী ইলিশের দাম কমেনি।

তবে এসব বিষয় মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ বছর ব্যাপকহারে ইলিশ আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এ কারণে দেশি ইলিশের চাহিদা কম। মিয়ানমারের ইলিশ দেখতে চকচকে হওয়ায় ক্রেতাদের বেশিরভাগই ঝুঁকছেন সেদিকে। দেশের সর্বত্র মিয়ানমারের ইলিশের ছড়াছড়ি। দেশি ইলিশের তুলনায় এগুলোর দামও কম। ফলে ব্যবসায়ীরা এ বছর লোকসানের কবলে পড়বেন বলেও আশঙ্কা তাদের।

এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন জানান, প্রতি বছর পহেলা বৈশাখকে ঘিরে ইলিশের বাজার রমরমা থাকে। আমরাও টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ইলিশ সংরক্ষণ করি। কিন্তু এ বছর তা হয়নি। বাজারে ইলিশের চাহিদা কম। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শও সেটি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। অন্যান্য বছর যেভাবে ক্রেতারা ইলিশ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে বাজারে এসেছে, এবার তা দেখা যায়নি। মিয়ানমার থেকেও ইলিশ আসার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু এসব ইলিশ চেনা খুবই কষ্ট। কারণ মিয়ানমারের ইলিশ দেখতে চকচক করে। দামও দেশি ইলিশের তুলনায় কম।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, এ বছর ইলিশের সরবরাহ ভালো হলেও দাম আগের মতোই। কিন্তু নানা কারণে চাহিদা কম। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশ আমদানি হওয়ায় সরবরাহ ব্যাপক। এ কারণে দেশি ইলিশের চাহিদা কম। অনেকে ইলিশ কিনতে এলেও দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেছেন, ‘কয়েক বছর ধরে পহেলা বৈশাখে ইলিশ নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি হয়েছে। বাড়াবাড়িও কম হয়নি। এ সময় আমরা খবরের কাগজে পড়েছি, একহালি ইলিশের দাম ৫০-৬০ হাজার টাকা। এগুলো নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি। আগের বছরগুলোতে আমরা ২-৩ হাজার টাকার নিচে একটি ইলিশ মাছ কিনতে পারিনি। অনেকের কাছে এই ২-৩ হাজার টাকা হয়তো তেমন কিছু নয়, কিন্তু এটাও তো সত্যি যে, এই টাকায় পুরো মাসের কাঁচাবাজার করা পরিবারের সংখ্যা কম নয়। পহেলা বৈশাখ এলেই ইলিশকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হতো। এর প্রভাব পড়তো সমাজের সর্বস্তরে। নিম্নআয়ের একজন মানুষ পহেলা বৈশাখে উচ্চদামে ইলিশ কিনতে না পেরে কষ্ট পেতেন। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানেও এ বছর ইলিশের চাহিদা কিছুটা কমেছে।

দেশের উল্লেখযোগ্য সুপার চেইন শপ স্বপ্ন’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির হাসান বলেন, ‘দেশে এখন প্রায় ৪ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয়। যা আমাদের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত। এ অবস্থায় ইলিশ আমদানির কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এ বছর মিয়ানমার থেকে ব্যাপকহারে ইলিশ আমদানি হয়েছে। দেশের বাজারগুলো মিয়ানমারের ইলিশে ছেয়ে গেছে। দেখতে এসব ইলিশ অনেক চকচকে হওয়ায় ক্রেতারা সেদিকেই ঝুঁকছেন। এমন অবস্থায় লোকসানের মুখে পড়ছেন দেশি ব্যবসায়ীরা।’

স্বপ্ন’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও জানান, এবার ইলিশের চাহিদা কমার ক্ষেত্রে অন্য কোনও ইস্যু তেমন কাজ করেনি। দেশি ইলিশ রক্ষায় মিয়ানমারের ইলিশ আমদানি বন্ধের বিষয়টি সরকারের নজরে আনার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে ইলিশের অবদান ব্যাপক। আমাদের মোট মৎস্য সম্পদের ১১ শতাংশই ইলিশের দখলে। জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। তাই সরকার দেশি ইলিশ রক্ষায় সব ধরনের উদ্যোগ নেবে।’