প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: ৫০০ কোটি ডলারের দুই সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের দু’টি লাইন অব ক্রেডিটের সমঝোতা স্মারকের বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সাড়ে চার শ কোটি ডলারের ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন, অন্যটি ৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনার ঋণ সহায়তা। এই প্রঙ্গে সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরকালে ৩০টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। এর মধ্যে লাইন অব ক্রেডিট সমঝোতা স্মারকের এই দু’টিও রয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১০ ও ২০১৫ সালে ভারত যে দু’টি লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে তিন শ কোটি ডলার দিয়েছিল, ৮ এপ্রিল যে দু’টি স্বাক্ষর করা হবে, সে দু’টি আগের দু’টি থেকে ভিন্ন। আগের দু’টি লাইন অব ক্রেডিটে প্রথমে টাকার অংক নির্দিষ্ট করে পরে প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু এবারে প্রাথমিক ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১৮টি প্রকল্প বাছাই করে মোট অংক যোগ করে লাইন অব ক্রেডিট নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সাড়ে চারশ কোটি ডলার লাইন অব ক্রেডিটের শর্তাবলি আগের মতোই থাকবে।’
এ ঋণে সুদের হার ১ শতাংশ। ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধযোগ্য। প্রথম পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। প্রকল্পে ব্যবহৃত ৭৫ শতাংশ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করতে হবে এবং প্রকল্পভেদে প্রয়োজন পড়লে এ’টি কমতে পারে। ভারতের এক্সিম ব্যাংক এ অর্থ যোগান দেবে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে রূপপুর নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ প্রকল্পে সহায়তা, পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদী সংরক্ষণ, রেল রাইনে সহায়তা, বিদ্যুৎ খাতে সহায়তা, চিটাগং ড্রাই ডকে সহায়তা, সড়ক খাতে সহায়তা ইত্যাদি।
সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেবে। সেখান থেকে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে।’ এ সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ভারতের সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথক চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে, যেখানে প্রকল্পের বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে বলেও তিনি জানান।
অস্ত্র কেনার লাইন অব ক্রেডিট
ভারত থেকে অস্ত্র কেনার জন্য ঢাকাকে ৫০০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিট দেবে দিল্লি। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার জন্য এক শ কোটি ডলারের ঋণ নিয়েছিল।
সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ বেশিরভাগ সামরিক সরঞ্জাম চীনের কাছ থেকে কেনে। এর বিভিন্ন কারণ আছে।’ তিনি বলেন, ‘সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীতা, ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতাসহ এর মূল্য বিচেনা করা হয়।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বেইজিং আমাদের সহজ শর্তে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে। একই ধরনের সুবিধা দিল্লির কাছ থেকে পেলে, সেখান থেকে অস্ত্র কিনতে কোনও অসুবিধা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে ৩৮ মিলিয়ন ডলারের একটি ক্রয়চুক্তি করেছে ভারত। যার মাধ্যমে ইয়াঙ্গুনকে সাবমেরিন বিধ্বংষী টর্পেডো সরবরাহ করবে দিল্লি।’
সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অনুযায়ী ২০১২-১৬ মেয়াদে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক ছিল ভারত। দেশটি অস্ত্র কেনার জন্য রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া ও কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে দেশটি রাইফেল, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, রাডার সিস্টেম, মিসাইল, অফশোর পেট্রোল ভেসেল, যুদ্ধজাহাজের জন্য মিয়ানমার, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, নামিবিয়া, ওমান, ইকুয়েডর ও মরিশাস থেকে অর্ডার পেয়েছে।’
এদিকে, বাংলাদেশ বেশিরভাগ অস্ত্র চীন থেকে কেনে। এছাড়া রাশিয়া ও কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশ থেকেও অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। এবারের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে ব্যবসাবান্ধব সামরিক সহযোগিতা কাঠামো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরেরও কথাও রয়েছে।
এ সমঝোতা স্মারকে বাণিজ্যিক উপাদান আছে যেখানে বলা হয়েছে, দুই দেশের সামরিক শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি খাতের যেকোনও প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে টিকে থাকতে সক্ষম, প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য সরবরাহ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং দুই দেশের জন্য লাভজনক, এমন জয়েন্ট ভেঞ্চার বা অন্যান্য ব্যবসা করতে পারবে। একই দফায় বলা আছে, এ ধরনের জয়েন্ট ভেঞ্চার যেন তৃতীয় পক্ষকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, চিটাগাং ড্রাই ডক, খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জ ড্রাইডক সামরিক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এদিকে, ভারতে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো সামরিক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
banglatribune.com