রিভিউতে সাজা বাড়ে এমন নজির নেই: খন্দকার মাহবুব
নিজস্ব প্রতিবেদক :মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ারহোসাইন সাঈদীর রিভিউ শুনানি ৬ এপ্রিলের মধ্যেই শেষ হবে এবং রিভিউতে সর্বোচ্চ সাজা হবে এমন আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
অন্যদিকে সাঈদীর পক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, রিভিউতে কখনো দন্ডাদেশ বৃদ্ধি করা হয় না। এমন কোন নজির বাংলাদেশে নেই।
তিনি বলেন, ‘সাঈদীর এ মামলায় দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। একটিতে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে, অন্যদিকে আমরা খালাস চেয়েছি।’ তিনি বলেন, যেহেতু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন মামলা। এক্ষেত্রে আমরা সময়ের আবেদন করবো। আশা করি আমরা সময় পাবো। আদালত সেটি পর্যালোচনা করে যেটা সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
এ মামলায় আদালতের যে ফাইন্ডিং দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে সাঈদী সরাসরি কোন অভিযোগে সংযুক্ত ছিলেন না। সে কারনে তাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়েছে তাতে কোনভাবেই তার এ সাজা হয় না।
সরকার পক্ষ থেকে যে রিভিউ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে যেহেতু অন্যান্য কেসে একই সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, এখানেও তেমনটি হওয়া কাম্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, রিভিউতে কখনো দন্ডাদেশ বৃদ্ধি করা হয় না। এমন কোন নজির উপমহাদেশে আছে বলে আমার জানা নেই। সেটা যাই হোক, বিচারক সেটা বিচার করবেন।’
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আশা করি এ মামলার রিভিউ আবেদনে শুনানি এক দিনেই শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা প্রকাশ করছি ঐদিনই (৬ এপ্রিল) রিভিউ আবেদনে শুনানি শেষ হবে এবং সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাজা বহাল থাকবে।’
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রিভিউ শুনানির জন্য সোমবার (০৩ এপ্রিল) আপিল বিভাগের কার্য তালিকার ১৪৭ নম্বরে উঠে আসে। এরপর বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ এ মন্তব্য করেন।
২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আবেদনে সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় পুনর্বহাল চাওয়া হয়।একই বছরের সাঈদীর খালাস চেয়ে ১৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছিলেন সাইদীর আইনজীবীরা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিতহয়। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই ৭০ জন নিহত হন।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন।অন্য চার বিচারপতি হলেন—বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।