ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় ওসি এসআই সহ ৬ পুলিশ কনষ্টবল এবং ২ পুলিশ সোর্সের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা
---
আমিরজাদা চৌধুরী , ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যুবককে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ কনষ্টবল এবং ২ সোর্সের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রট শফিকুল ইসলামের আদালতে এ মামলা দায়ের হয়। আদালত ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ৭ ফেব্রুয়ারী শহরের কান্দিপাড়ার বাসিন্দা আল-আমীনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের বুকে একাধিক গুলির দাগ ছিল। নিহত আলামিনের মাতা নেছা বেগম ১৩ ফেব্র্রুূয়ারী মামলার বাদী হয়েছেন। মামলা নং সিআর ১০১/১৭। এতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈনুর রহমান, এসআই আশরাফ, পুলিশের সোর্স খোকন ও সুমনকে হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। পুলিশ অবশ্য বলেছে, নিহত আল-আমীন মাদক ব্যবসার অধিপত্য নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরেই দু, গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সে নিহত হয়। তার স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যরা জানান, পুলিশ প্রকাশ্যে তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে। এ দিকে এ ঘটনা নিয়ে সদর থানা পুলিশের দায়ের করা হত্যা ও অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে পৃথক ভাবে দায়ের করা মামলা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সদর থানার এসআই নারায়ণ চন্দ্র দাস মামলা পৃথক দুটি দায়ের করেন। মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয় পরকল্পিত হত্যাকান্ড। ঐ মামলায় ভারতের হাসপাতালে ভর্তি কিডনী ও হার্ট আক্রান্ত রোগী ও কারাগারে আটক একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামী করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, পুলিশের দায়ের করা মামলার ৯ নং আসামী কালু মিয়া। সে কিডনী ও হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত। মামলা হওয়ার ১১ দিন আগেই ভারতের জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার সকালে তার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের ২য় তলার ১১ নং ওয়ার্ডের ৫ নং সিটে রয়েছেন। তাকে অস্ত্র ও হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। একই মামলার ৩ নং আসামী জাকির হোসেন দীর্ঘ দিন ধরে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা কারাগারে। তিনি চলতি মাসের ১২ ফেব্রুয়ারী জেলা কারাগার থেকে জামিন পায়। অপর আসামী এরশাদ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রয়েছে। সূত্র বলছে, এরা সবাই মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্থানীয় সুত্র বলছে, হার্ট ও কিডনী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় এবং কারাগারে আটক ব্যক্তি কি ভাবে গোলাগুলিতে অংশ নিয়েছে এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারী সদর থানায় পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১১ ও ১২। সূত্র গুলো জানিয়েছে, ভারতে চিকিৎসাধীন এবং কারাগারে আটক ব্যক্তিদের আসামী করার মধ্যদিয়ে প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা নয় তো।
প্রসঙ্গ এ হত্যাকান্ডের পর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইনুর রহমান আগেই জানান, সে তারিখ রাত ২টায় পৌরশহরের মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার সংলগ্ন খোলা জায়গায় গুলোগুলির ঘটনা ঘটে। তিনি নিজেও গুলির শব্দ পান। বেতার দিয়ে টহল দল সেখানে পাঠান। সেখানে দু,পক্ষের গুর্লি বিনিময় হয়। এতে একজন আহত হলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়। কতৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। আর নিহতের স্ত্রী তানজিন অভিযোগ করে বলেন, সে দিন বিকেল চারটায় থানার আশরাফ দারোগা পুলিশ সোর্স খোকনকে সাথে নিয়ে এসে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। তখন তারা সাদা পোষাকে ছিল। আটকের পর তাকে পানিতে চুপাতে থাকে। তাকে নির্মান ভাবে নিযাতন করে। থানায় তারা আসলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় আল আমীন নামে কাউকে আমরা ধরে আনি নি। সকালে সোর্স খোকন মোবাইলে জানায়, তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে নিয়ে আসার জন্য। তিনি আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ তার স্বামী আল আমিনকে গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি জড়িত ওই পুলিশ সদস্য ও তার সোর্সদের বিচার দাবি করেন।