‘মানুষের আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করব’
নিজস্ব প্রতিবেদক : অতীতের নানা বিতর্ক এড়িয়ে দেশের আগামীর নির্বাচনগুলোতে মানুষের আস্থা ফেরানো নতুন নির্বাচন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন ও তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মূল কারিগরের ভূমিকায় থাকতে হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশনকে।
নতুন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামও বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফেরানোটাই নতুন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর তিনি সেই চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়েই কাজ করবেন। বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে বিবার্তাকে এ কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘ আলাপকালে রফিকুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের কাজটি কারও একার নয়, কাজটি পুরো টিমের। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে তারা সবাই মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেয়া সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শপথের অপেক্ষায় আছি। শপথ হয়ে গেলে আমরা আগে নিজেদের গুছিয়ে নেব। তারপর মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সঠিকভাবে পালনের পরিকল্পনা গ্রহণ করবো। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। কারণ, আমরা সবাই দেশের মানুষেরই আস্থা অর্জন করতে চাই।’
আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি ২৬টি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ১২৮টি নাম থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়। এই ১০ জনের মধ্যে থেকে ৫ জনকে গত সোমবার রাতে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এতে সাবেক সচিব নুরুল হুদা প্রধান কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পান। তার নেতৃত্বে অন্য চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে নিয়োগ পান রফিকুল ইসলাম। তবে কোন দল তার নাম সুপারিশ করেছিল, তা নিজেই জানেন না বলে জানিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল ইসলামের দেশের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি নিয়োগ পাওয়ায় গোদাগাড়ীবাসী বেজায় খুশি। রফিকুল ইসলাম ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারী বর্তমান গোদাগাড়ী পৌরসভার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৃত তফির উদ্দিন আহমেদ সরকার ওরফে তুফান ম-ল। মায়ের নাম রোজিনা বেগম। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি।
রফিকুল ইসলাম ১৯৬৫ সালে গোদাগাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। ওই সময় তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে গোদাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগ নিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পাস এক বছর পিছিয়ে যায় তার। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগ নিয়ে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
এরপর বৃত্তি নিয়ে চলে যান বুলগেরিয়া। সেখানে অর্থনীতি ও পর্যটন ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি দেশে ফিরে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৮২ সালে তিনি বিসিএস দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসনে যোগ দেন। ২০০৭ সালে তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। সেখানে ২০০৯ সালে হন অতিরিক্ত সচিব।
এরপর ২০১১ সালে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এক বছর পর তিনি সচিব হিসেবে চলে যান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকেই ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করেন। এরপর একটি প্রাইভেট ফার্মের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেলেন গোদাগাড়ীর এই কৃতি সন্তান।
রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, চাকরির কারণে তিনি এখন ঢাকার বাসিন্দা। তবে গোদাগাড়ী তাকে ভীষণভাবে টানে। সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন আম-রেশমের এই দেশে। তার স্ত্রী নাজমুল আরা বেগম ইডেন গার্লস কলেজে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৯ সালে অবসর নিয়েছেন। তার এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে এখনও পড়াশোনায়।