মানুষের জন্য কান্না নাই, কান্না রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য : প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক : “মানুষের জন্য কোন দুঃখ নাই, মানুষের জন্য কোন কান্না নাই, মানুষের ভালমন্দ দেখার দরকার নাই, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য তারা কাঁদছে। রামপাল নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে অনুরোধ করব, তারা যেন সুন্দরবনে যান, রয়েল বেঙ্গলের সঙ্গে দেখা করে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা। ”
আজ শনিবার চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৭তম জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রামপালে কয়লাভি্ত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্দোলন তারা ঢাকায় বসে করেন, তারা কিন্তু জীবনেও কখনও রামপালে যাননি। তারা যদি সেখানে একটু ঘুরে আসেন, যে কতদূর ওখান থেকে সুন্দরবন। আমি তো বলব, রামপালে যেয়ে ওখান থেকে যদি তারা পদযাত্রা শুরু করেন সুন্দরবন পর্যন্ত, তাহলে জানতে পারবে যে সুন্দরবন কতদূর। রামপাল স্থানটা দেখে ওখান থেকে পদযাত্রা করুক সুন্দরবন পর্যন্ত। এটা করার পর না হয় তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাক। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রামপালে যখন আমরা কাজ শুরু করি তখন রাস্তাঘাট কিছুই ছিল না। একমাত্র নৌপথে যাওয়া যেত। এখন আস্তে আস্তে রাস্তাঘাট হচ্ছে। একসময় তাদের হেলিকপ্টারে রামপাল দেখানো হয়েছে। হেলিকপ্টারে দেখালে তো বুঝবে না। এজন্য রামপাল স্থানটা দেখে ওখান থেকে পদযাত্রা করুক সুন্দরবন পর্যন্ত। ” বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে বপ্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুঃখের কথা না বলে পারি না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে সুন্দরবন ধ্বংস হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপালে হচ্ছে, এটা কিন্তু সুন্দরবনে হচ্ছে না। আর সুন্দরবন সেখান থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীরে। সুন্দরবনের যে অংশ ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেখান থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। কাজেই সেখানে কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। ”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটা করছি এটা হচ্ছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। পৃথিবীর সবথেকে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা তৈরি করছি। সেখানে আমরা পাঁচ লাখ বৃক্ষরোপণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতিমধ্যে দেড় লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ উচ্চতায় চিমনি করা হচ্ছে। কয়লার যে ছাইটা হবে, এদেশে যত সিমেন্ট কারখানা আছে, অনেকে ইতোমধ্যেই কন্ট্রাক্ট করে ফেলেছে যে তারা ছাইটা কিনে নেবে। ” তিনি বলেন, “কয়লা আনা হবে কভার্ড কার্গোতে করে যাতে নদী দূষিত না হয়। ইতোমধ্যে সেখানে একটি খাল, ঘাসিয়া খাল নামে পরিচিত যেটা জাতির পিতা চালু করে দিয়ে গেছেন ১৯৭৪ সালে, পরবর্তীতে আর এটা তেমন ড্রেজিং কিংবা সংরক্ষণ হয়নি। আমরা ঘাসিয়াখাল ড্রেজিং করেছি। আরও ৮০টা খাল ড্রেজিং করার জন্য প্রকল্প পাস করেছি। ”
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কিছু লোক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাপী তারা যে এটা প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে সুন্দরবন ধ্বংস হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপালে হচ্ছে, এটা কিন্তু সুন্দরবনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, “মাত্র কিছুদিন আগে প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন কয়লাবাহী একটি জাহাজ সুন্দরবনের কাছে ডুবে গেছে। যারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এত দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এবং আন্দোলন করছেন আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, এই যে এক হাজার মেট্রিকটন কয়লা যে পানিতে ডুবে গেল, তাতে ওই এলাকায় কতটুকু ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের। সেই ব্যাপারে তারা সেখানে গেছেন কিনা, দেখেছেন কিনা বা ওটা নিয়ে কোন যাচাই করেছেন কিনা। তাদের তো যাওয়া উচিৎ, কিন্তু তারা সেখানে যাননি। ”
দেশের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের মূল দায়িত্ব প্রকৌশলীদের কাছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এসব উন্নয়নকাজ যেন বিদেশিদের কাছে অনুসরণীয় হয়। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী সব সময় দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত থাকে। আইইবি’র সভাপতি কবির আহমদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে কনভেশনে সম্পাদক আব্দুস সবুরও বক্তব্য দেন। এছাড়া আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি এবং ৫৭তম কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরী ও সম্মানী সম্পাদক প্রবীর কুমার সেন বক্তব্য দেন। দেশ-বিদেশের প্রায় ছয় হাজার প্রকৌশলী যোগ দেন সম্মেলনে। সেখানে বেশ কিছু সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে তা সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন প্রকৌশলীরা।