আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে কলকাতার কাছে ব্যান্ডেল শহরে এক ব্যক্তি এটিএম মেশিনে টাকা তুলতে গিয়ে আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন – কিন্তু তাকে পড়ে যেতে দেখেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
প্রায় আধঘণ্টা এটিএম বুথের সামনে পড়ে থাকার পর যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তার আগেই তিনি মারা গেছেন।
এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি টুইটারে এই মৃত্যুসংবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।
ভারতের নানা প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ যেমন এটিএম মেশিনের সামনে টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন, গতকাল সকালে তেমনই একজন ছিলেন সরকারি কর্মচারি কল্লোল রায় চৌধুরী।
নিজের বাড়ি থেকে বেশ দূরে ব্যান্ডেলে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার একটি এটিএম মেশিনের সামনে তিনিও দাঁড়িয়েছিলেন – যখন হঠাৎ তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
পাশে পড়ে গিয়ে কাতরাতে থাকা সত্ত্বেও কেউ লাইন ছেড়ে তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, তাকে ধরাধরি করে সাথে সাথে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেনি।
তার স্ত্রী পরে জানিয়েছেন, পরিবারের কেউও জানত না তিনি ব্যান্ডেলে এটিএম বুথের সামনে লাইন দিয়েছেন। নিজের মাইনের টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে, আর সেটা তোলার চেষ্টাতেই তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
রাস্তার অপরিচিতরাও তার জন্য লাইনে নিজেদের জায়গা ছাড়তে চাননি – বরং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে পড়ে থাকা রায় চৌধুরীকে পা দিয়ে ডিঙিয়েও লোকে লাইনে এগিয়ে যাচ্ছেন।
নিহতের ভাইপো সুশোভন রায় চৌধুরী বলছিলেন, মানুষ যে এত অমানবিক হতে পারে তা তারা ভাবতেই পারেননি।
তার কথায়, ‘মানুষের ওপর বিশ্বাসটাই নষ্ট হয়ে গেল। যে মানুষগুলো লাইনে ছিলেন, একজন মারা যাচ্ছেন দেখার পরেও টাকা তোলাটাই তাদের কাছে বড় হয়ে গেল? যদি তারা ঠিক সময়ে মানুষটাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেন তাহলে আমার কাকা হয়তো বেঁচেও যেতে পারতেন!’
এই মৃত্যুসংবাদ টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেই – যিনি বড় অঙ্কের নোট বাতিলের জেরে মানুষের দুর্ভোগকে অস্ত্র করে গত বেশ কিছুদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সাথে তাকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘মোদিবাবু শুনছেন?’
তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক মনীষা দাশগুপ্ত বলছিলেন মানুষ যখন দলবদ্ধভাবে থাকে – যেমন এখানে এটিএমের লাইনে – তখন এই ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।
তার কথায়, ‘মানুষ যখন এই পরিস্থিতিতে থাকে তখন ভাবে আরো তো অনেকে আছে, কেন আমাকেই যেতে হবে? কিন্তু হয়তো যদি ঘটনাস্থলে মাত্র এক-দুজন থাকতেন তাহলে হয়তো তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেত?’
ড: দাশগুপ্ত মানছেন, এখন টাকা তোলার ভোগান্তিতে মানুষ নিশ্চয় বাড়তি স্ট্রেসে আছে – কিন্তু মুমূর্ষু কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য না-করার জন্য সেটা কোনো অজুহাত হতে পারে না।