নিউজ ডেস্ক : ইউরোপের ১৪টি দেশ থেকে তারা এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে স্রেফ এক নজর দেখতে। বুদাপেস্টে শেখ হাসিনার সরকারি সফর। তাতে কমিউনিটির কোনো কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত ছিলো না।
বস্তুত হাঙ্গেরির এই রাজধানীতে বাংলাদেশি কমিউনিটি খুব একটা নেই। কিন্তু তারপরেও তিন দিন ধরে বেশ বাংলাদেশির আনাগোনা চোখে পড়ছিলো। এরা কেউ হয়তো হোটেলের বাইরে কেউ হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী তার কর্মসূচিগুলোতে আসা যাওয়ার পথে কেউ কেউ হয়তো একটু সালাম জানানো সুযোগ পেয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী সালামের উত্তর দিয়ে গাড়ির কিংবা লিফটের পথে পা বাড়ান। কারও পক্ষে সালামটা পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ মেলে না। কিন্তু এরা রয়েছেন। সেই ২৭ নভেম্বর রাতে শেখ হাসিনা যখন বুদাপেস্ট পৌঁছান তখন থেকেই তারা রয়েছেন। এর কেউ এসেছেন জার্মানি, কেউ ফ্লান্স, কেউ লন্ডন থেকে এসেছেন।
কেউ এসেছেন ইতালী, ভিয়েনা, গ্রিস, বেলজিয়াম থেকে। গত তিন দিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা গেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা যায় সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক বাংলাদেশি জড়ো হয়েছন এই ফোর সিজন হোটেল গ্রেসাম প্যালেস বুদাপেস্টের হল রুমে। এরা সবাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি। যারা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কিংবা সমর্থক।
সেখানে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মানুষগুলোর সঙ্গে প্রাণখুলে কথা বললেন। ধৈর্য্য ধরে তাদের কথাও শুনলেন। আর বললেন, আমি দেখেছি আপনারা এই ক’দিন এখানে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। আমি কথা বলতে পারিনি, সময় দিতে পারিনি। বুঝতেই পারেন, ওয়াটার সামিট চলছে, তাতে অংশগ্রহণ তার পাশাপাশি দ্বি-পাক্ষিক সফরের নানা কর্মসূচি। এগুলোতে অংশ নিতে হয়। যথা সময়ে ছুটতে হয়।
সুশৃংখল দর্শক তথা দলীয় নেতা-কর্ম-সমর্থকরা তাদের নেত্রীর কথায় সায় দিলেন। সামান্য স্লোগান উঠলেও তা দ্রুত থামানো হলো। প্রধানমন্ত্রীই জানিয়ে দিলেন, এই হোটেল হল রুম, এখানে স্লোগান দেওয়া যাবে না। এরপর তিনি দিলেন এক অনবদ্য বক্তৃতা। টানা ৫৪ মিনিটের সে বক্তৃতায় প্রথমেই তিনি ওয়াটার সামিট ও দ্বি-পাক্ষিক সফরের বিষয়ে জানালেন।
পানি সম্মেলন কেনো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, হাঙ্গেরির সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক, স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা এসব কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করেন। আর দ্বি-পাক্ষিক এই সফরকে সফল বলে উল্লেখ করে বলেন, এতটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হাঙ্গেরি বাংলাদেশের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তা অসাধারণ।
একে একে তার বক্তৃতায় উঠে আসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলার বিভিন্ন দিক। বিএনপির কঠোর সমালোচনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, খালেদা জিয়ার কাছে তার যাওয়ার আর প্রশ্নই ওঠে না। তিনি এও বলেন খালেদা জিয়া কিভাবে রাজনীতিকে কলুসিত করে তুলেছেন।
বাংলাদেশর উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে অনেকেই জানতে চান, কোন ম্যাজিক বলে বাংলাদেশ আজ এত উন্নতি করতে পারছে। আমি উত্তরে তাদের বলি, আমার কাছে কোনো ম্যাজিক নেই, আমি দেশখে ভালোবাসি, ভালোবেসেই দেশ পরিচালনা করছি, আর তাতেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
পরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নেতা-কর্মীদের প্রতিনিধিরা ব্কতব্য রাখেন। এদের কেউ কেউ তাদের কাজ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা একেকজন বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর। সে হিসাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন এটাই আমার প্রত্যাশা। বাংলানিউজ