রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর পুঠিয়ায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আব্দুল খালেক (২৭) নামের এক যুবকের দুই হাতের কবজি উড়ে গেছে। এ ছাড়া তাঁর ডান চোখও ঝলসে গেছে। গুরুতর জখম হয়েছে বুক ও মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ।
গতকাল শনিবার রাতে এ বিস্ফোরণের পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় খালেককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, উপজেলার তাড়াস বেলপুকুর এলাকায় যে বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তার মালিকের নাম জাহিদ আলী (৩০)। তাঁর বাবার নাম সোহরাব আলী। আর বিস্ফোরণের শিকার আব্দুল খালেক চারঘাট উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ওসি জানান, বিস্ফোরণের পর শনিবার রাতভর জাহিদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি বোমা, কম্পোজ করা দুই পৃষ্ঠার উগ্রপন্থী বার্তা, একটি হেলমেট ও বিস্ফোরণে খসে পড়া খালেকের হাতের দুটি আঙ্গুল উদ্ধার করা হয়েছে। খালেকের চাচাতো ভাই লালন হোসেন কয়েক মাস আগে সাংগঠনিক বই ও লিফলেটসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি এখন কারাগারে।
ওসি হাফিজুর রহমান জানান, তাঁদের ধারণা, আহত যুবক জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বা ধর্মীয় উগ্রবাদী কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য। আর জাহিদের বাড়িতে সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক দ্রব্যও তৈরি করা হতো সেখানে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আহত খালেক চারঘাটের এম এ হাদি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র হলেও ঠিকমতো কলেজে যেতেন না। নীরব প্রকৃতির খালেক কারো সঙ্গে তেমন মেলামেশাও করতেন না। বেশির ভাগ সময় তিনি বাড়ির দরজা বন্ধ করে থাকতেন।
এদিকে, পুঠিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আসলাম আলী জানান, শনিবার রাতে চারঘাটের গোপালপুরে আহত আব্দুল খালেকের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে দুটি বোমা, পাঁচটি হাসুয়া, দুটি চায়নিজ কুড়াল, দুটি বই, একটি ডিভাইস এবং টাইমবোমার মতো একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে খালেকের ভাই সাদেকুল ইসলাম (৩২) ও তাঁর ভাবি ইসমত আরাকে (২৫) আটক করা হয়েছে।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়া জানান, বিস্ফোরণের পর জাহিদের বাড়ির সদস্যসহ খালেকের সহযোগীরা পালিয়ে যায়। তাদের আটক করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। জঙ্গিরা এ অঞ্চলে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তারা সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
পুঠিয়ায় বোমা বিস্ফোরণ এবং দুই উপজেলা থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধারের ঘটনায় পুঠিয়া ও চারঘাট থানায় আলাদা আলাদা মামলা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।