ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা: কি করেছেন এমপি, স্থানীয় নেতারা
---
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরের ওপর হামলার দুদিন পরেও সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে । স্থানীয়দের মন থেকে শঙ্কা এখনও কাটেনি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্যও।
মুসলমানদের পবিত্র কাবাঘরের প্রতি অবমাননাসূচক একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার জেরে গত রোববার নাসিরনগর উপজেলায় একদল বিক্ষুব্ধ লোক হিন্দুদের বাড়িঘর-মন্দিরে হামলা করে।
শতাধিক বাড়ি এবং দশটিরও বেশি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এর আগেও গত বছর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর মাদ্রাসার ছাত্রদের বিরুদ্ধে।
এই এলাকায় বেশ কিছু মাদ্রাসা রয়েছে, অন্যদিকে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। তাই এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে এ জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কতোটা ভূমিকা রাখেন, এ নিয়েও একটা প্রশ্ন আছে।
এ নিয়ে কথা হচ্ছিল নাসিরনগরের বাসিন্দা বলাই দত্তর সাথে। তিনি বলছিলেন, এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন ছিল খুবই সুন্দর। পূজা-পার্বণ সবকিছুতেই স্থানীয় মুসলিমদের সহযোগিতা তারা পেয়ে থাকেন। জনপ্রতিনিধিরাও সহযোগিতা করেন।
“কিন্তু এ ধরণের ঘটনা এখানে কখনো ঘটেনি। জনপ্রতিনিধিরা বা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে কি করেছে তা আমরা বুঝতে পারি নি।”
“শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য জনপ্রতিনিধিরা তৎপর থাকেন, কিন্তু এ ঘটনার সময় তারা তৎপর ছিলেন কিনা তা বলতে পারলাম না। তারা যদি থাকতো তাহলে অবশ্যই কিছু মানুষ রক্ষা পেতো । ” – বলছিলেন মি. দত্ত।
এখানে মাদ্রাসার আধিক্যের বারণে এগুলোর সাথে সম্পৃক্তরা রাজৈনৈতিকভাবে শক্তিশালী বলে ধারণা করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে সে জন্য কোন হামলার সময় মাদ্রাসার ছাত্ররা জড়িত থাকলে জনপ্রতিনিধিরা তার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে পারেন না। কিন্তু নাসিরনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার এ অভিযোগ মানতে রাজি নন।
“আমরা সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এখানে উপস্থিত ছিলাম। দৌড়াদৌড়ি করেও আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি নি। বিচ্ছিন্ন কিছু লোকজন মন্দিরে হামলা করেছে। তাদের হাতে রামদা,শাবল, বাঁশের মতো অস্ত্র ছিল- তাই কেউ এটা প্রতিহত করতে পারে নি। ”
তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেবার জন্য তারা সব সময়ই সক্রিয়।
তবে মাদ্রাসাগুলোর ছাত্র শিক্ষকরা বলছেন যে কোন কিছু ঘটলেই তাদের ওপর দোষ চাপানো হয়, এবং তাদের মতে এটা রাজনীতির অংশ।
এখানকার সবচেয়ে বড় মাদ্রাসার শিক্ষক এবং হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি এনামুল হাসান বলছেন, সহিংসতা নয়, ইসলাম আক্রান্ত হলেই তারা কেবল প্রতিবাদ করেন।
” আসলে ইসলাম আগে থেকেই আক্রান্ত। নোংরা রাজনীতির কারণেই ওলামায়ে কেরাম , বিশেষ করে মাদ্রাসাগুলোর ওপর আক্রমণ হয়, এবং ‘ব্লেম গেম’ করা হয়।”
” এ ধরণের ঘটনা যখন ঘটে , তখন আমরা সচেতন লোকজনের সাথে পরামর্শ করি যেন ভবিষ্যতে এ ঘটনাগুলো আর না হয়। যে একসিডেন্টগুলো হয়ে যায়, তাকে তো আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। ” বলেন মুফতি এনামুল হাসান।
তবে স্থানীয় মুসলমানদের কেউ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা রোধ করতে এগিয়ে আসেন -এ নিয়ে পক্ষেবিপক্ষে যত বিতর্কই থাকুক না কেন। রোববারের হামলার সময়ও হিন্দু বাড়ি রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখেছিলেন স্থানীয় যুবক জামাল উদ্দিন।
“আমি তখন আমার জীবনের কথা চিন্তা করি নি। আমার ভাই, আমার গ্রাম, আমার সমাজ – ওদের তো কোন দোষ ছিল না। ওরা তো একেবারে নিরপরাধ লোক, এরকম বর্বরোচিত হামলা কেন ওদের ওপর হবে? এরা তো কোন অন্যায় করে নি।”
জামাল উদ্দিন বলছিলেন,”আমার এক ভাই এরকম অযাচিত হামলার শিকার হবে, আমার মা-বোনের ইজ্জত যাবে – তাহলে আমাদের থেকে লাভ কি? আমরা একটুখানিও নিজের প্রতি মায়া ছিল না।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের জেলার বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব থাকে, তাদের কথাই শেষ কথা। কিন্তু এসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ভুমিকা রাখতে পারছেন না কেন?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আল-মামুনকে এ প্রশ্ন করাতে তিনি বললেন, “আসলে আকস্মিক ভাবে এসব ঘটনা ঘটে। এটা মোবাইল ফোনের যুগ। গত বছরের ঘটনাটা কেউ বুঝতে পারে নি, বা টের পায় নি। বুঝতে পারলে , টের পেলে তা প্রতিহত করার মতো রাজনৈতিক শক্তি আমাদের আছে। ”
দুটো ঘটনা ঘটে যাবার পর তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
আরো সচেতন হবার তাগিদ অনুভব করছেন তারা।