নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়লেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের একপর্যায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে। আজ শুক্রবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিনি মঞ্চে বক্তব্য শুরু করেন।
এর আগে সম্মেলনে আগত সকল নেতাকর্মী, কাউন্সিলর, শুভানুধ্যায়ী, ডেলিগেটদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরই তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ‘৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হামলায় শহিদ হওয়া বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার, মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদ, সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন যুদ্ধের ক্ষত কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই নেমে এলো ভয়াবহ বিভীষিকা। নির্মমভাবে হত্যা করা হলো স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারকে। আমি পিতৃহারা হলাম। মাকে হারালাম। ভাই হারালাম। স্বজন হারালাম। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরিবারকে হারিয়ে আমি বাংলার মানুষের কাছে ফিরে এসেছিলাম। বাবার স্নেহ ফিরে পেতে আমি এসেছি এ দেশের মানুষের কাছে। এসেছি মায়ের স্নেহ ফিরে পেতে। ভাইয়ের ভালোবাসা ফিরে পেতে আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা জানান। তিনি বলেন, এ দেশকে পিছনে নিয়ে যেতে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সব সময় কাজ করেছে। তারপরও এ দেশের কোটি কোটি দেশপ্রেমিক কৃষক, শ্রমজীবী মানুষের চেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আর কোনো দরিদ্র মানুষ যাতে না থাকে সে জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এ পর্যন্ত ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চালু করেছি। ৫৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ভাতা পাচ্ছে। হিজড়া, জেলে, হরিজন সম্প্রদায়ের মতো অনগ্রসরদের ভাতা দিচ্ছি। সহযোগিতা করে যাচ্ছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বর্গা চাষিদের জামানত ছাড়া স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছি। ১০ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। কৃষকের ভর্তুকির টাকা সরাসরি সেই অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে। স্বল্প মূল্যে কৃষি উপকরণ দিয়েছি। ৩ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য উৎপাদন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একটি মানুষ যেন না খেয়ে না থাকে সেটিই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শুধু ভাতা দিয়ে চলবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তাই একটি বাড়ি একটি খামার চালু করেছি। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মাইক্রো সেভিংস কর্মসূচি চালু করেছি। সবার হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে পেরেছি। এলাকাভিত্তিক কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করেছি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ তথ্য পাচ্ছে। ৫২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার সারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছি। গৃহহীনদের বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি। এরই মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থা করেছি। ১৯৩ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম করেছি। ১৬ হাজার ৪৩৮ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছি। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনা পয়সায় ৩০ প্রকারের ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। যার ফলে মাতৃমৃত্যু হার কমেছে। এক লাখ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েছি।
উল্লেখ্য, আজ শনিবার সকালে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে।