আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভিন্ন দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’কেই উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার কারণ বলছে ইকুয়েডর। তারা বলতে চাইছে, অ্যাসাঞ্জ মার্কিন নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের তথ্য ফাঁস করে ইকুয়েডরের ‘কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা’র নীতিগত অবস্থান ভেঙেছেন। তবে উইকিলিকসের দাবি, অ্যাসঞ্জের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নেপথ্যে মার্কিন চাপ ছিল। দাবির সপক্ষে সম্ভাব্য প্রমাণ হাজির করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ। একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বেনামি সূত্রের বরাত দিয়ে তারা দাবি করেছে, হিলারির ইমেইল ফাঁসের ‘রুশ পরিকল্পনা’র বাস্তবায়নকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে অ্যাসাঞ্জকে।
অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সীমিতকরণে মার্কিন চাপের বিরুদ্ধে একমত হয়েছেন আর্থ ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের সিইও রবার্ট স্টিলি, উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জের ঘনিষ্ঠ মিত্র সাংবাদিক জন পিলজার এবং ইন্টারন্যাশল অ্যাকশন সেন্টারের প্রধান সারা ফ্লাউন্ডার। তবে ল্যাতিন রাজনীতি বিশ্লেষকরা এর মধ্যে ইকুয়েডরের মার্কিনবিরোধী অবস্থান পোক্ত হাওয়ার ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন। এদিকে গ্লোবাল রিসার্চের এক প্রতিবেদনেও মার্কিন হস্তক্ষেপকেই ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নকরণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে উঠে আসে দুই দেশের বাণিজ্যসম্পর্কের প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রে নাম ওঠে এসেছে মার্কিন বৃহৎ কর্পোরেশন গোল্ডম্যান স্যাকসের নাম। কিছুদিন আগেই উইকিলিকস গোল্ডম্যান স্যাকসে হিলারি ক্লিনটনের দেওয়া একটি একান্ত ভাষণ ফাঁস করে। আর মার্কিন হস্তক্ষেপের অনুঘটক হিসেবে উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির নাম। অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট যেদিন বিচ্ছিন্ন করা হয় সেদিন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছিলেন কেরি। অনেকেই এটাকে ‘কাকতালীয়’ মানতে নারাজ। আর উইকিলিকস দাবি করেছে, ফার্ক বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় অঘোষিত পার্শ্ব বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ও জন কেরি। এ বৈঠকে অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ইকুয়েডরকে চাপ দেন কেরি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছে।
আর্থ ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের সিইও রবার্ট স্টিলি মনে করেন, হিলারি ক্লিনটনের আরও তথ্য ফাঁসের আশঙ্কায় ভীত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবার্ট বলেন, ‘বারাক ওবামা ও মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক জনগণকে মিথ্যা বলছেন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভাসির্টিই স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, প্রতারণা ও কারচুপির মাধ্যমে বার্নি স্যান্ডার্সের প্রার্থীতা কুক্ষিগত করেছেন হিলারি ক্লিনটন। এর মধ্যে অ্যাসাঞ্জ যখন ১ নভেম্বর হিলারির গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন তখন পুরো যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আতঙ্কে ভুগছে। ইকুয়েডর আশঙ্কা করছে তাদের পুরো দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হতে পারে। ফলে অ্যাসাঞ্জ এখানে দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছেন।’
উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জের ঘনিষ্ঠ মিত্র সাংবাদিক জন পিলজার গার্ডিয়ানকে জানান, অ্যাসাঞ্জের বিকল্প ব্যবস্থা আছে। প্রতিষ্ঠাতার চেয়েও বড় কিছুতে পরিণত হয়েছে এখন উইকিলিকস। পিলজার বলেন, ‘আমি মনে করি না ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ফলে উইকিলিকস বা অ্যাসাঞ্জকে তথ্য ফাঁস করা থেকে আটকাতে পারবে। ইকুয়েডরের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। স্পষ্টতই, দেশটি চাপের মধ্যে আছে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর গোপন তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছালে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বিষয়টা কিভাবে তা নিয়ে উদ্বেগে আছে ইকুয়েডর।’
ইন্টারন্যাশল অ্যাকশন সেন্টারের প্রধান সারা ফ্লাউন্ডার মনে করেন, অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মধ্য দিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি, হস্তক্ষেপ ও নির্বাচন বানচালের কথা। ফলে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট ব্যবহার করা নিয়ে মার্কিন হুমকির মুখে ছিল ইকুয়েডর। হিলারির ইমেইল ফাঁস এবং এ সংক্রান্ত কোনও খবর যাতে প্রকাশ না পায় তা চায় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংকটের কথা তারা ইন্টারনেটে প্রকাশ হোক চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যায় এমন নথি ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকে তখন তারা বাধা দেয়।’
গ্লোবাল রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন ক্ষতিকর কিছু প্রকাশ করা রোধ করতে হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংকের পছন্দের প্রার্থী হিলারি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইকুয়েডরের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে নাকি ওয়াল স্ট্রিট সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। হিলারির গোল্ডম্যান স্যাকসে দেওয়া একান্ত বক্তব্য ফাঁসের পর অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা কাকতালীয় হতে পারে না।
গ্লোবাল রিসার্চের প্রতিবেদনে ইকুয়েডরের সঙ্গে গোল্ডম্যান স্যাকসের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ইকুয়েডর গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপ ইনকর্পোরেশনে তিন বছরের দেশটির রিজার্ভের অর্ধেক স্বর্ণ স্থানান্তরে রাজি হয়। তেলের মূল্যপতনের ফলে মূল্যস্ফীতি রোধ করতে এ পদক্ষেপ নেয় ইকুয়েডর। ধারণা করা হয়, ইকুয়েডর ওই সময়ের দাম হিসেবে ৫৮০ মিলিয়ন ডলার মূল্যে সোনা স্থানান্তর করে। ফলে এটাকে পূঁজি করে গোল্ডম্যান স্যাকস যে ইকুয়েডরের ওপর চাপ সৃষ্টি করেনি তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
লাতিন আমেরিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোরেয়ার ক্ষমতা প্রদর্শন এবং দেশে তার মার্কিন-বিরোধী অবস্থানকে পোক্ত করার সুযোগ দিয়েছে। সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞানি জে.ডি. বোয়েন বলেন, ‘কোরেয়া হয়ত ভেবেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে না জড়িয়ে সহজ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাবে এ পদক্ষেপের মাধ্যমে।’
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস এর প্রেসিডেন্ট এমেরিটাস লেসলি এইচ. জেব মনে করেন, রাশিয়ার চুরি করা হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল ফাঁসকারী অ্যাসাঞ্জকে সহযোগিতা করায় যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইকুয়েডর দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘অ্যাসাঞ্জ আমাদের অনেক ক্ষতি করেছেন। আর ইকুয়েডর তাকে কূটনৈতিক দায়মুক্তি দিয়ে, অবস্থান করতে দিয়ে এসব করার সুযোগ দিয়েছে। আমাদের দায়িত্ব ইকুয়েডরকে চাপ দেওয়া যাতে করে তারা অ্যাসাঞ্জকে বের করে দেয়।’
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ইকুয়েডরের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসনে ভূমিকার কথা জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ খবর জানায় এনবিসি। ওই মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি এক ধরণের উচ্ছেদকরণ নোটিশ।’
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, অ্যাসাঞ্জ হিলারির ফাঁস করা ইমেইল পেয়েছে রুশ গোয়েন্দাদের কাছ থেকে। আর এই ফাঁসের উদ্দেশ্য মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। এই সিদ্ধান্তের পরই মার্কিন প্রশাসন ইকুয়েডরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে এনবিসি জানিয়েছে।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও দাবি করেন, ‘সাধারণভাবে তিনি (অ্যাসাঞ্জ) রুশ পরিকল্পনার একজন অংশগ্রহণকারী, মূল পরিকল্পনাকারী নন। তারা বুঝতে পেরেছে যে, তারা তাকে ব্যবহার করতে পারবে, আর তারা তা করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অম্ল-মধুর সম্পর্ক থাকলেও ২০১০ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় হিলারি ক্লিনটনকে ইকুয়েডরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন কোরেয়া। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে কোরেয়া হিলারি সম্পর্কে একেবারে সরাসরি কিছু বলেননি। চলতি বছরের জুলাই মাসে এক সাক্ষাৎকারে কোরেয়া বলেন, ‘লাতিন আমেরিকার জন্য কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলো ভালো হবে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি হয়ত আপনাদের অবাক করে দেব। আমার উত্তর হবে: ট্রাম্প। তিনি খুব নির্দয়, ফলে এর প্রতিক্রিয়ায় লাতিন আমেরিকায় প্রগতিশীল সরকার গঠনে আরও বেশি সমর্থন পাওয়া যাবে।’ ওই সাক্ষাৎকারে কোরেয়া স্পষ্ট করেন যে, তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন না। বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের মঙ্গলের জন্য সাধারণভাবে আমি আশা করি হিলারি ক্লিনটন জিতবেন।’
অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়ায় ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রশ্নে তোপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। উইকিলিকস দাবি করেছে, গত মাসে কলম্বিয়ায় ফার্ক বিদ্রোহীদের শান্তি আলোচনার সময় কেরি ব্যক্তিগতভাবে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অনুরোধ জানান কেরি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেরির এ ধরনের কোনও অনুরোধ ও একান্ত বৈঠক আয়োজনের কথা অস্বীকার করেছে। তবে কেরির বিরুদ্ধে এই বিস্ফোরক অভিযোগটির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা। তাদের দাবি, কেরি তার পদাধিকার ব্যবহার করে হিলারিকে আরও বিপদজনক তথ্য ফাঁস থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রচারণা সহকারী চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু হেমিংওয়ে মনে করেন কেরির এই পদক্ষেপ ‘চরম লজ্জাকর’। তিনি বলেন, ‘এ কেবল বর্তমান প্রশাসন যেভাবে তার সব রকম রাজনৈতিক পূঁজি হিলারির পক্ষে ব্যবহার করছে, তারই ধারাবাহিকতা।’ তিনি আরও দাবি করেন, এফবিআই অত্যন্ত কোমলভাবে হিলারির ইমেইল বিষয়ক তদন্ত পরিচালনা করছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ও ট্রাম্পের ম্যাসাচুসেটস প্রচারণার সহকারী প্রধান জিওফরি ডেইল কেরির এই প্রস্তাবের সময় নির্ধারণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘উইকিলিকস অনেকদিন ধরেই কাজ করছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই তা চলে আসছে। হঠাৎ এমন কী হলো যে জন কেরি অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন!’
অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি স্বীকার করে দেওয়া ইকুয়েডরের বিবৃতিতে মার্কিন নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্য কাউন্সিল অব অ্যামেরিকান অ্যাম্বাসেডরের সদস্য ও বারবাডোজ ও পূর্ব ক্যারিবিয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জি ফিলিপ হগস দাবি করেন, উইকিলিকসের কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্র ও ইকুয়েডরের জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বহুমুখী দৃষ্টিকোণ রয়েছে। আমি বলব যে, কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সুযোগ পেলে এমনটাই ভাববেন। এটা বেশ চতুর পদক্ষেপ, যদিও তেমন স্বচ্ছ নয়।’
তিনি কেরির অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে আরও বলেন, ‘দেখুন, এটা আমাদের স্থানীয় রাজনীতির প্রশ্ন।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মুখপাত্র মার্ক টোনার এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে কেরি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘উইকিলিকস ইস্যুতে এবং নির্দিষ্ট করে বললে অ্যাসাঞ্জের প্রসঙ্গে আমাদের উদ্বেগ সর্বজনবিদিত। কিন্তু তার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে আমাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। এক্ষেত্রে যা করার তা ইকুয়েডর সরকার করেছে।’
ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জের কণ্ঠরোধ করার নেপথ্যে যারাই থাকুক এটা স্পষ্টত যে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন এস্টাব্লিশমেন্ট মরিয়া যাতে করে হিলারির সত্যিকার চরিত্র প্রকাশ না পায়। ব্যাপারটা শুধু হিলারির নয়, হিলারি এখানে পূঁজিবাদী রাজনীতির প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। হিলারির প্রচারণা ম্যানেজারের ১৭ হাজার ইমেইল ফাঁস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ধারণা করা হচ্ছে আরও প্রায় ৩৩ হাজার ইমেইল ফাঁসের অপেক্ষায় আছে।
সাবেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা অ্যালান বি ওয়েস্টের ব্লগের সহযোগী সম্পাদক মাইকেল জেসে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কি ওবামা প্রশাসনের আন্তর্জাতিক শক্তির ওপর প্রভাবের একটি উদাহরণ নয়? যদি এ তথ্য সত্য হয় তবে তা আশঙ্কাজনকও বটে। দুর্ভাগ্যক্রমে যদি এটা সত্য হয় তবে আমেরিকার জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে ওবামা প্রশাসন তাদের নিজেদের এবং ভবিষ্যত শাসকের স্বার্থে ও রক্ষা করতে এটা করছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাজনৈতিক শত্রুকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে। কেবল একটা প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে, তারা আমাদের কাছ থেকে কত কী লুকাচ্ছেন?’
উল্লেখ্য, অ্যাসাঞ্জ ২০১২ সালের ১৯ জুন ইকুয়েডর দূতাবাসে পালিয়ে এসে সুইডেনে নির্বাসন এড়াতে সমর্থ হন। সুইডেনে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তিনি মামলার জন্য সুইডেনে গেলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সুইডেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি পালানোর চেষ্টা করলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। দূতাবাস ভবনের সামনে সব সময় ব্রিটিশ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সূত্র: আরটি, গার্ডিয়ান, গ্লোবাল রিসার্চ, অ্যালান বি ওয়েস্ট ডট কম, বোস্টন গ্লোব।